Followers

বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৬

Anemia:অ্যানিমিয়া এবং কিছু কথাবার্তা


অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা কী?

অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা বলতে এমন একটা অবস্থাকে বোঝানো হয় যেখানে শরীরে যথাযথ পরিমাণে লোহিত রক্তকণিকা থাকে না যাদের কাজ হচ্ছে অক্সিজেন বহন করা। এই অবস্থাটার অনেক রকমফের আছে। যেমন শিকল সেল অ্যানিমিয়া,থ্যালাসেমিয়া,হাইপোথাইরয়ডিজম,ভিটামিন বি-১২ এর অভাব ইত্যাদি।যদি আমরা চিন্তা করি শিকল সেল অ্যানিমিয়া অথবা থ্যালাসেমিয়া নিয়ে তাহলে দেখা যায় এতে আক্রান্ত ব্যক্তি জন্মগতভাবে এই রোগ পেয়েছেন অর্থাৎ জীনগতভাবে বা উত্তরাধিকারসূত্রেই তিনি বহন করছেন কিন্তু অন্য দিকে যদি দেখা হয় দেহে ভিটামিন বি-১২ অথবা লৌহ এর অভাবের কথা তাহলে দেখা যায় দীর্ঘদিন ধরে হয়তো ওই দুটি উপাদান সমৃদ্ধ খাবার তাদের খাদ্যতালিকায় নেই যেগুলো খুব অত্যাবশ্যকীয়ভাবে দরকার লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদনের জন্য।

এবারে একটু জেনে নেওয়া যাক এই অ্যানিমিয়া শব্দের উৎপত্তি বিষয়ে। উনিশ শতকের শুরুর দিকে দুটি গ্রীক শব্দ an যার অর্থ without এবং haima যার অর্থ blood থেকে anaimia এবং সবশেষে আধুনিক ল্যাটিন হয়ে  anemia শব্দটি আমরা পাই।

অ্যানিমিয়ার কিছু লক্ষণ

ক্লান্ত বা ভারসাম্যহীন অনুভব করা

দেহে লৌহ বা ভিটামিন বি-১২ এর অভাব হলে একটি সুনির্দিষ্ট প্রোটিন হিমোগ্লোবিন হতে পারে না যা শরীরের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন পরিবহনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।এর ফলাফল তাহলে কি দাঁড়াচ্ছে?আমাদের দেহের খুব ক্ষুদ্র একটা কাজ করার জন্যও  অক্সিজেন অপরিহার্য কিন্তু যখন এই অক্সিজেন আসার বাহক অনুপস্থিত থাকছে বা পরিমাণে কম উৎপন্ন হচ্ছে তখন কোষে অক্সিজেন কম পৌঁছায় বা হয়তো যেতে পারেই না যে কারণে দেখা যায় ঠিকমত শ্বাস প্রশ্বাসের কাজ হচ্ছে না,দেহের বিভিন্ন বিপাকীয় কাজ ব্যাহত হচ্ছে।আর এভাবেই প্রায় সময় নিজেকে খুব ক্লান্ত মনে হয় বা ভারসাম্য পাওয়া যায় না।

ত্বক ধুসর বা ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া

যেহেতু হিমোগ্লোবিনের অভাবে বিভিন্ন কোষে প্রয়োজনীয় পরিমাণে অক্সিজেন যাচ্ছে না তাই দেহের সবচেয়ে বড় অঙ্গ ত্বক অনেকটা বর্ণহীন মনে হয়।লৌহ বা ভিটামিন বি-১২ এর ঘাটতির জন্য ত্বকে যথাযথভাবে রক্ত পৌঁছায় না তাই ত্বক অনেক সময় কিছুটা হলুদাভ মনে হয়।

বুকে ব্যাথা অনুভব করা

যখন দেহে লোহিত রক্তকণিকার পরিমাণ কমে যায় তখন আমাদের হৃদপিন্ডকে কাজ করতে হয় অর্থাৎ খাটতে হয় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি।অর্থাৎ ব্যাপারটা দাঁড়াচ্ছে এরকম যে যেহেতু লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা কম তাই ওই কম সংখ্যক রক্ত কোষকে সারা শরীরে পৌঁছানোর জন্য হৃদপিণ্ডকে অনেক বেশি শ্রম দিতে হচ্ছে।এই যে অস্বাভাবিকতা,এটাই অনেক সময় অনুভব হয় বুক ব্যাথা রূপে।

মনে রাখা দরকার যে অ্যানিমিক কন্ডিশনের জন্য বুকে ব্যাথা অনুভব হলে কখনোই সেটা উপেক্ষা করাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না বিশেষত তাদের জন্য যারা ইতোমধ্যেই অন্য কোনো হৃদরোগজনিত সমস্যায় ভুগছেন।

শিকল সেল অ্যানিমিয়া

অ্যানিমিয়ার এই রূপ একটা জীনগত সমস্যা।সুস্থ একজন ব্যক্তির দেহে হিমোগ্লোবিন যে অবস্থায় থাকে তার চেয়ে ভিন্নবস্থায় থাকে তাদের দেহে যারা এই জেনেটিক ডিজ-অর্ডারে ভুগছেন।

টিস্যুতে থাকা কোষের যাবতীয় কাজের জন্য অক্সিজেনের নিরবিচ্ছিন্ন প্রবাহ থাকা প্রয়োজন।সাধারণত লোহিত রক্তকণিকায় থাকা হিমোগ্লোবিন ফুসফুসে গিয়ে অক্সিজেনের সাথে বন্ধন তৈরী করে দেহের কোষে কোষে অক্সিজেন পৌঁছানোর কাজ করে থাকে।যেসব লোহিত রক্তকণিকা স্বাভাবিক অর্থাৎ সুস্থ হিমোগ্লোবিন ধারণ করে তাদের আকার হয় অনেকটা চাকতির (disc) মতএই বিশেষ আকৃতির পিছনেও কারণ আছে।এই আকৃতিটা সুযোগ করে দেয় যাতে তারা খুব সহজেই রক্ত নালিকার মধ্য দিয়ে চলে যেতে পারে এবং অক্সিজেন পরিবহন করতে পারে।কিন্তু যারা শিকল সেল অ্যানিমিয়াতে আক্রান্ত তাদের হিমোগ্লোবিন কিছুটা ভিন্ন রকমের হয়।এদের ভিন্নতার জন্য লোহিত রক্তকণিকাগুলো হয় কিছুটা অর্ধচন্দ্রাকৃতির (crescent)

এবার আরও কিছুটা ভিতরে যাওয়া যাক।

সুস্থ এবং স্বাভাবিক যে হিমোগ্লোবিন তাদেরকে বলা হয় হিমোগ্লোবিন এ ; আর যেসব হিমোগ্লোবিন ধারণ করে আছেন শিকল সেল অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা সেগুলোকে বলা হয় হিমোগ্লোবিন এস।এদের একটা বড় পার্থক্য হচ্ছে হিমোগ্লোবিন এ অক্সিজেন ছেড়ে দেওয়ার পরও অর্থাৎ ডি-অক্সিজেনেটেড হলেও দ্রবণীয়ই থাকে কিন্তু ডি-অক্সিজেনেটেড হলেই অদ্রবণীয় হয়ে যায় হিমোগ্লোবিন এস এবং এর কারণেই এরা তখন পলিমার তৈরী করে এবং অনেকটা একীভূত হয়ে যায় নিজেরা নিজেরা।এই অদ্রবণীয় অবস্থায়ই বহুলাংশে দায়ী লোহিত রক্তকণিকার অর্ধচন্দ্রাকৃতি আকৃতির জন্য।

এখন প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে যে এতবার শুরু থেকে বলে আসা হচ্ছে শিকল সেল অ্যানিমিয়া জেনেটিক ডিজ-অর্ডার কিন্তু জেনেটিক চেঞ্জটা কোথায় হচ্ছে তাহলে?

এই যে পরিবর্তিত হিমোগ্লোবিন এটা কেন হয়?যেহেতু সে একটা প্রোটিন তাই তার তৈরি হওয়ার জন্য অবশ্যই একটা জেনেটিক সিকোয়েন্স লাগবে।যে জেনেটিক সিকোয়েন্সের জন্য সুস্থ হিমোগ্লোবিন দরকার তাতে সামান্য একটা পরিবর্তন আসে।

এখানে উল্লেখ্য যে হিমোগ্লোবিনের চারটা চেইন আছে যাদেরকে বলা হয় আলফা ১ ও আলফা ২ এবং বিটা ১ ও বিটা ২।

হিমোগ্লোবিন এস এর পরিবর্তিত বৈশিষ্ট্যসমূহ আসে কারণ বিটা চেইনদ্বয়ের ছয় নাম্বার স্থানে দুটো অ্যাামিনো এসিড গ্লুটামেট  ( Glutamate ) এর বদলে ভ্যালিন (Valine) থাকে। এর ফলে স্বাভাবিকের চেয়ে এই হিমোগ্লোবিনে দুইটি ঋণাত্মক চার্জ কম থাকে এবং এই কম থাকাটাই দায়ী তার নিজেদের মাঝে একীভূত হয়ে যাওয়ার জন্য।

হিমোলাইটিক অ্যানিমিয়া

অ্যানিমিয়ার এই রূপে লোহিত রক্তকণিকা ধ্বংস হয়ে যায় এবং তাদের সুনির্দিষ্ট জীবনকালের আগেই তারা রক্তপ্রবাহ থেকে সরে যায়।

স্বাভাবিকভাবে একটা নির্দিষ্ট সময় পরপর যখন রক্তকণিকা মারা যায় তখন অস্থিমজ্জা আবার এদের তৈরী করে কিন্তু হিমোলাইটিক অ্যানিমিয়াতে রক্তকণিকা এতটাই তাড়াতাড়ি মারা যায় যে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহ অভাব মেটাতে গিয়ে তাল মেলাতে পারেন অত দ্রুত।

এর ফলে অনেক সময় অ্যারিদমিয়াস,হার্ট এনলারজমেন্ট,হার্ট ফেইলিউর দেখা যায়।

আজকে এ পর্যন্তই।পরবর্তীতে কথা হবে এই সম্পর্কিত কিছু অন্যান্য বিষয় নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই সুস্থ থাকুন, ভাল থাকুন।

তথ্যসূত্র