Followers

বুধবার, ৫ জুলাই, ২০১৭

Shape of You: তোমার আকার

হ্যালো বন্ধুরা কেমন আছেন? আশা করি আপনাদের সবার ঈদ অথবা ইদ খুব ভাল কেটেছে। চলুন আজকে একটা জিনিস নিয়ে গল্প করা যাক।
গল্পের নাম একদম শিরোনামেই আছে। কেউ দয়া করে ভুল বুঝবেন না প্লিজ। আমরা প্রোটিনের আকার নিয়ে কথা বলব। এবার চিন্তামুক্ত হওয়া গেল তাহলে! 😊

প্রায় ১২০,০০০ ধরণের প্রোটিনের সম্পর্কে বিজ্ঞান অবগত। সংখ্যাটা অনেক শোনাচ্ছে, তাই না? প্রকৃতপক্ষে তা না। প্রোটিনের গঠন সম্পর্কে বিশদ ব্যাখ্যা করার জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে যে প্রক্রিয়াগুলোঃ এক্সরে – ক্রিস্টালোগ্রাফি বা নিউক্লিয়ার – ম্যাগনেটিক রেসোনেন্স (এনএমআর)। কিন্তু এই পদ্ধতিগুলো সব ধরণের প্রোটিনের ক্ষেত্রে উপযুক্ত নয়। বিস্তারিত জানার জন্য কিছু প্রোটিনের যথেষ্ট পরিমাণ সহজলভ্য না অথবা ততটা বিশুদ্ধ করাও সম্ভব হয় না।অর্থাৎ যে কোনো স্যাম্পল সম্পর্কে জানার জন্য তাঁর একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অবশ্যই অ্যানালাইসিসের জন্য লাগে এবং সেই পরিমাণটুকু অনেক প্রোটিনের ক্ষেত্রে পাওয়া যায় না। কিছু প্রোটিন আবার ক্রিস্টালাইজডই হয় না- যা কি না এক্সরে পদ্ধতি অনুসরণের একটি পূর্বশর্ত। ফলশ্রুতিতে আবিষ্কৃত প্রোটিনের সংখ্যাটা নিতান্তই কম। এরা মোট ১৬,০০০ প্রোটিন ফ্যামিলির মাত্র এক তৃতীয়াংশকে প্রতিনিধিত্ব করে। গবেষকরা অজানাগুলোর এক তৃতীয়াংশের জন্য যথাযথ কম্পিউটার মডেল তৈরী করতে পারেন কেন না তারা ইতিমধ্যে জানা প্রোটিনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। আর অবশিষ্টগুলোর জন্য এখনও তেমন কোনো কিছুই করা যাচ্ছে না।


এই তথ্যস্বল্পতার সাথে আরও রয়েছে বেশ কিছু ঘাটতি। এই ঘাটতিগুলো হচ্ছে গবেষকদের প্রধান আগ্রহ যেসব প্রজাতি নিয়ে যেমন- হোমো স্যাপিয়েন্স  । আবিষ্কৃত প্রোটিনগুলোর মাত্র এক চতুর্থাংশ হচ্ছে মানুষের। অবশিষ্টাংশের মাঝে বেশিরভাগগুলোই ব্যাকটেরিয়ার। তথ্য স্বল্পতা হচ্ছে একটি বড় সমস্যা কারণ প্রোটিনের কাজ এবং গঠন নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। প্রোটিন হচ্ছে ক্ষুদ্র অণুসমূহের একটি চেইন যাদেরকে বলা হয় অ্যামিনো এসিড। এই চেইনটি হতে পারে কয়েক শ থেকে হাজার খানেক অ্যামিনো এসিডের লিংক। একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে (যেটি এখনও পুরোপুরি বোধগম্য নয়) এই চেইনটি বিভিন্নভাবে ভাঁজ হয়ে একটি ত্রি মাত্রিক আকার ধারণ করে। প্রোটিনের আকার নির্ধারণ করে দেয় যে তার কাজ কী হবে? প্রোটিনটি একটি চ্যানেল হিসেবে কাজ করে কোন কেমিক্যালের কোষে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, এনজাইম হিসেবে কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়াকে গতিশীল করতে পারে অথবা কোনো কেমিক্যাল সিগন্যাল গ্রহণ করে কোষের মলিক্যুলার মেশিনারির কাছে পাঠাতে পারে।
অধিকাংশ ওষুধ একটি সুনির্দিষ্ট প্রোটিনের একটি সুনির্দিষ্ট জায়গায় যুক্ত হয়ে প্রোটিনের কাজকে বন্ধ অথবা পরিবর্তনের মাধ্যমে তাদের  নিজেদের কাজ করে। ড্রাগ ডিজানিং বা নতুন ওষুধ তৈরী করাটা খুব সহজ হয়ে যায় যদি সেই নির্দিষ্ট জায়গাটা অর্থাৎ বাইন্ডিং সাইটটা জানা যায় অগ্রিমভাবে। কিন্তু এটি সেই প্রোটিনের গঠন জানারই নামান্তর। প্রোটিনের গঠন সম্পর্কে চেইনে উপস্থিত অ্যামিনো এসিডের ক্রম থেকে মন্তব্য করতে পারাটা তাই হবে অমূল্য এক ব্যপার। অবশ্যই ব্যপারটা কষ্টসাধ্য কিন্তু ইতিমধ্যেই এটি আলোর মুখ দেখাচ্ছে।
চেইন গ্যাং    
প্রোটিন ফোল্ডিং এর মত চমৎকার একটি বিষয়ে গবেষণার জন্য প্রথিতযশাদের মধ্যে একজন হচ্ছেন সিয়াটলের ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটন এর ডেভিড বেকার। গত ২০ বছর যাবত তিনি এবং তাঁর সহকর্মীরা ব্যবহার করে আসছেন রোজেটা  নামক একটি অত্যন্ত সূক্ষ্ম প্রোগ্রাম যেটি একটি প্রদত্ত প্রোটিনের সম্ভাব্য বেশ কয়েকটি আকার সম্পর্কে ধারণা দেয় এবং পরবর্তীতে সর্বাধিক স্থিতিশীল আকারটি নির্ণয় করার প্রচেষ্টার মাধ্যমে একদম বাস্তব আকারটি বের করে আনা হয়। ২০১৫ সালে তাঁরা অনুপস্থিত প্রোটিন ফ্যামিলির ৫৪ টির প্রতিনিধিত্বকারী সদস্যের গঠনের ধারণা দিয়েছেন। পরের মাসেই তাঁরা ৬১৪ টির গঠন সম্পর্কে পূর্বাভাস দেন।
একটি ক্ষুদ্র প্রোটিনও হাজার হাজার আকারে ফোল্ড করতে পারে যেগুলো সবই কম বেশি স্থিতিশীল। এই কাজগুলো করার জন্য মাইক্রোপ্রসেসর লাগে।
কেন এত গুরুত্বপূর্ন প্রোটিনের গঠন

ধরা যাক আলঝেইমার নামক অসুখটির কথা। আলঝেইমার মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে। কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্রোটিন এবং নিউরনগুলো মিস ফোল্ড হওয়া শুরু করে। এরপর এরা সঞ্চিত হয় নিউরনের বাইরে যাদেরকে বলা হয় অ্যামোলয়েড। অর্থাৎ অ্যামোলয়েড হচ্ছে মিস ফোল্ডেড প্রোটিনের গুচ্ছ। অ্যামোলয়েডের বৃদ্ধি বাড়ার সাথে সাথে নিউরনের উপর প্রভাব বিস্তার করে। নিউরনের যে কোন বার্তা পাঠানোর সক্ষমতা পরিবর্তিত হয় যার কারণে ডিমেনশিয়া এবং স্মৃতি নষ্ট হয়ে যায়। 




তথ্যসূত্র