Followers

বৃহস্পতিবার, ১৯ জুলাই, ২০১৮

CANCER- whose potentials are hidden in yourself!!!!


ক্যান্সার।যতটাই পরিচিত একটা রোগ ততটাই মরণঘাতি।আমরা সাধারণভাবে ক্যান্সার কি তা জানি,টিউমার থেকে  ক্যান্সার হয় এটাও জানি, এবং সবশেষে কেমোথেরাপি একটি উপায় হতে পারে রোগমুক্তির জন্য এটাও কারো অজানা নয়।কিন্তু যদি আমরা একটু মাইক্রো লেভেলে চিন্তা করি তাহলে কিন্তু ক্যান্সারের কারণ নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিটা একটু হলেও ভিন্ন হবে।

তাহলে শুরু করা যাক, হ্যাঁ অবশ্যই ক্যান্সারের আগের ধাপ টিউমার কিন্তু কনসেপটটা আরও একটু গভীর,আরও একটু আলোচনার দাবী রাখে।

ক্যান্সার সৃষ্টির পিছনে কোষের ভেতরে যে সুপ্ত জিন জেগে উঠা কাজ করে তার নাম "অনকোজিন"(Oncogene)। অনকোজিন সৃষ্টির আগে সুস্থ স্বাভাবিক জিনকে বলা হয় প্রোটো অনকোজিন (Proto-oncogene)। কিছু বায়োকেমিকাল সিগনাল ,ফ্যাক্টর এবং সেল সাইকেলে কোন প্রসেসিং এ ছন্দপতন হলে সুস্থ স্বাভাবিক জিন অনকোজিনে রূপান্তরিত হয়।যেটা আসলে ক্যান্সারের সুপ্ত বীজ। 

প্রতিটা সেলে কিছু গ্রোথ রিসেপ্টর (Growth Receptor) থাকে যেখানে লিগ্যান্ড এসে বাইন্ড করে সেলকে সিগন্যাল পাস করে বোঝায় যে তার এখন সেল সাইকেলে প্রবেশ করে অপত্য কোষ তৈরি করার সময় এসে গেছে।

পুরো সেল সাইকেল ভালোভাবে চালানোর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হচ্ছে CDK-Cycline complex. CDK হলো একটা এনজাইম যার পূর্ণরূপ "cycline dependent kinase"। এটা একটা কাইনেজ এনজাইম এবং কাইনেজ ক্যাটাগরির এনজাইম মূলত ফসফোরাইলেশন বিক্রিয়া মানে একটা ফসফেট গ্রুপ যুক্ত করে । আর সাইক্লিন হলো একটা রেগুলেটরি প্রোটিন যেটি ট্রান্সক্রিপশনের সময় ডিএনএর সাথে বাইন্ড করে ট্রান্সক্রিপশন প্রসেসকে সাহায্য করে।

সেল সাইকেলের প্রতিটা ফেজে যেমন G1,G2,S প্রতিটা ফেজে এই সাইক্লিন-সিডিকে যৌগ প্রতিবার চেক করে সেলকে অনুমতি দেয় পরের ফেজে যাওয়ার জন্য।





সেলের ডিএনএ তে অবস্থিত দুইটা গুরুত্বপূর্ণ জিন হলো রাস জিন আর এমওয়াইসি জিন(
RAS and MYC)। রাস জিন থেকে রাস প্রোটিন তৈরি হয়।রাস প্রোটিন কোষের প্লাজমা মেম্ব্রেনের ঠিক নিচে থাকে,এতে ক্রমাগত ফসফেট গ্রুপ যুক্ত হয়ে একটা অন্তঃকোষীয় ফসফোরাইলেশন ক্যাসকেড তৈরি করে। ক্যাসকেড বলতে অনেকটা ফসফেট চেইন বুঝানো হয়।

এই ক্যাসকেড থেকে ফাইনালি আউটপুট হিসেবে কিছু ট্রান্সক্রিপশন ফ্যাক্টর পাওয়া যায় যেগুলা পুনরায় ডিএনএ কে একটিভেট করে গ্রোথ ফ্যাক্টর সাইক্লিন সিডিকে তৈরি করে।

এবং একটু চিন্তা করুন রাস জিনে মিউটেশনের ফলে যে মিউটেট রাস প্রোটিন তৈরি হচ্ছে তার ক্যাসকেড থেকে যে ট্রান্সক্রিপশন ফ্যাক্টর পাওয়া যাচ্ছে সেটা যদি ডিএনএকে ইফেক্ট করে সাইক্লিন সিডিকে এর মতো গ্রোথ ফ্যাক্টরকে বাড়িয়ে দেয় তাহলে এই সাইক্লিন নিয়ন্ত্রিত সেল সাইকেল থেকে কি আউটপুট পাওয়া যাবে? অনেক অনেক সেলের স্তূপ । যার নাম টিউমার। ফলশ্রূতিতে ক্যান্সার।

আরেকটা জিন হলো MYC জিন।এই জিনের ট্রান্সলেশনেও কিছু ফ্যাক্টর পাওয়া যায় যেগুলা সেল গ্রোথ একটিভেটর রূপে কাজ করে। এই জিনে মিউটেশন ঘটলে সেল গ্রোথ ফ্যাক্টর গুলার প্রোডাকশন অস্বাভাবিক রূপে বেড়ে যায়।
RAS and MYC দুই টাইপের জিনেই সাধারণত তিন টাইপের মিউটেশন ঘটতে দেখা যায়-
১) পয়েন্ট মিউটেশন
২) ক্রোমোসোমাল ট্রান্সলোকেশন

৩)জিন এমপ্লিফিকেশন


পয়েন্ট মিউটেশন- ডিএনএর একটা স্ট্রিঙের সিঙ্গেল কোন একটা নিউক্লিটাইড চেঞ্জ হয়ে যাওয়া। যেই নিউক্লিওটাইড আছে রেপ্লিকেশনের সময় ঠিক সেটা না এসে অন্য কোনটা আসলো।



ক্রোমোসোমাল ট্রান্সলোকেশন- জিনের কিছু অংশ সরে ভুল জায়গায় বসে যাওয়া।ক্রোমোসোমের সেগমেন্ট একই ক্রোমোসোমেরই অন্য জায়গায় অথবা ভিন্ন ক্রোমোসোমে চলে যাওয়া।
জিন এমপ্লিফিকেশন- ডিএনএ এর কোন অংশের ডুপ্লিকেট তৈরি হওয়া।এক্ষেত্রে প্রোটো অনকোজিনের ক্রোমোসোমের কিছু এক্সট্রা কপি তৈরি হওয়া।


ক্যান্সার সৃষ্টির পিছনে আরও এক ধরণের জিন দায়ী যাকে বলে  Tumor Suppressor Gene. এই জিনের কাজ হলো কোষ বিভাজন প্রক্রিয়াকে স্লো করে দেয়া, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো "অ্যাপোপটোসিস" প্রক্রিয়াতে সাহায্য করা।

Apoptosis হলো কোষের মৃত্যু ঘটানোর প্রক্রিয়া।কোষের বৃদ্ধি বন্ধ করে তাকে অপসারণ করার প্রক্রিয়া।

 TP53 gene একটি টিউমার সাপ্রেসর জিন যেটি P53 প্রোটিন তৈরি করে। এই প্রোটিন অ্যাপোপটোসিস প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
টিপি৫৩ জিনে মিউটেশন হলে পি৫৩ প্রোটিনের প্রোডাকশন বন্ধ হয়ে যায়।

মোট কথা, Oncogene একটিভ হলে এবং একই সাথে Tumor Suppressor Gene(TPG) ইনএকটিভ হলে ক্যান্সার সৃষ্টি হয়।
মিউটেশন অনকোজিনকে একটিভ করে আর টিউমার সাপ্রেসর জিনকে ইনএকটিভ করে দেয়।




তাহলে ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় কার্যকারণ আমাদের দেহের মধ্যেই বিদ্যমান। আমরা প্রতিনিয়ত ক্যান্সারের পটেনশিয়াল বহন করে চলছি। বিভিন্ন বাহ্যিক এবং আভ্যন্তরীণ ফ্যাক্টর বদলে দিতে পারে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ জিনগুলো, যার ফলাফল হতে পারে ক্যান্সার। 


বুধবার, ৫ জুলাই, ২০১৭

Shape of You: তোমার আকার

হ্যালো বন্ধুরা কেমন আছেন? আশা করি আপনাদের সবার ঈদ অথবা ইদ খুব ভাল কেটেছে। চলুন আজকে একটা জিনিস নিয়ে গল্প করা যাক।
গল্পের নাম একদম শিরোনামেই আছে। কেউ দয়া করে ভুল বুঝবেন না প্লিজ। আমরা প্রোটিনের আকার নিয়ে কথা বলব। এবার চিন্তামুক্ত হওয়া গেল তাহলে! 😊

প্রায় ১২০,০০০ ধরণের প্রোটিনের সম্পর্কে বিজ্ঞান অবগত। সংখ্যাটা অনেক শোনাচ্ছে, তাই না? প্রকৃতপক্ষে তা না। প্রোটিনের গঠন সম্পর্কে বিশদ ব্যাখ্যা করার জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে যে প্রক্রিয়াগুলোঃ এক্সরে – ক্রিস্টালোগ্রাফি বা নিউক্লিয়ার – ম্যাগনেটিক রেসোনেন্স (এনএমআর)। কিন্তু এই পদ্ধতিগুলো সব ধরণের প্রোটিনের ক্ষেত্রে উপযুক্ত নয়। বিস্তারিত জানার জন্য কিছু প্রোটিনের যথেষ্ট পরিমাণ সহজলভ্য না অথবা ততটা বিশুদ্ধ করাও সম্ভব হয় না।অর্থাৎ যে কোনো স্যাম্পল সম্পর্কে জানার জন্য তাঁর একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অবশ্যই অ্যানালাইসিসের জন্য লাগে এবং সেই পরিমাণটুকু অনেক প্রোটিনের ক্ষেত্রে পাওয়া যায় না। কিছু প্রোটিন আবার ক্রিস্টালাইজডই হয় না- যা কি না এক্সরে পদ্ধতি অনুসরণের একটি পূর্বশর্ত। ফলশ্রুতিতে আবিষ্কৃত প্রোটিনের সংখ্যাটা নিতান্তই কম। এরা মোট ১৬,০০০ প্রোটিন ফ্যামিলির মাত্র এক তৃতীয়াংশকে প্রতিনিধিত্ব করে। গবেষকরা অজানাগুলোর এক তৃতীয়াংশের জন্য যথাযথ কম্পিউটার মডেল তৈরী করতে পারেন কেন না তারা ইতিমধ্যে জানা প্রোটিনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। আর অবশিষ্টগুলোর জন্য এখনও তেমন কোনো কিছুই করা যাচ্ছে না।


এই তথ্যস্বল্পতার সাথে আরও রয়েছে বেশ কিছু ঘাটতি। এই ঘাটতিগুলো হচ্ছে গবেষকদের প্রধান আগ্রহ যেসব প্রজাতি নিয়ে যেমন- হোমো স্যাপিয়েন্স  । আবিষ্কৃত প্রোটিনগুলোর মাত্র এক চতুর্থাংশ হচ্ছে মানুষের। অবশিষ্টাংশের মাঝে বেশিরভাগগুলোই ব্যাকটেরিয়ার। তথ্য স্বল্পতা হচ্ছে একটি বড় সমস্যা কারণ প্রোটিনের কাজ এবং গঠন নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। প্রোটিন হচ্ছে ক্ষুদ্র অণুসমূহের একটি চেইন যাদেরকে বলা হয় অ্যামিনো এসিড। এই চেইনটি হতে পারে কয়েক শ থেকে হাজার খানেক অ্যামিনো এসিডের লিংক। একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে (যেটি এখনও পুরোপুরি বোধগম্য নয়) এই চেইনটি বিভিন্নভাবে ভাঁজ হয়ে একটি ত্রি মাত্রিক আকার ধারণ করে। প্রোটিনের আকার নির্ধারণ করে দেয় যে তার কাজ কী হবে? প্রোটিনটি একটি চ্যানেল হিসেবে কাজ করে কোন কেমিক্যালের কোষে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, এনজাইম হিসেবে কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়াকে গতিশীল করতে পারে অথবা কোনো কেমিক্যাল সিগন্যাল গ্রহণ করে কোষের মলিক্যুলার মেশিনারির কাছে পাঠাতে পারে।
অধিকাংশ ওষুধ একটি সুনির্দিষ্ট প্রোটিনের একটি সুনির্দিষ্ট জায়গায় যুক্ত হয়ে প্রোটিনের কাজকে বন্ধ অথবা পরিবর্তনের মাধ্যমে তাদের  নিজেদের কাজ করে। ড্রাগ ডিজানিং বা নতুন ওষুধ তৈরী করাটা খুব সহজ হয়ে যায় যদি সেই নির্দিষ্ট জায়গাটা অর্থাৎ বাইন্ডিং সাইটটা জানা যায় অগ্রিমভাবে। কিন্তু এটি সেই প্রোটিনের গঠন জানারই নামান্তর। প্রোটিনের গঠন সম্পর্কে চেইনে উপস্থিত অ্যামিনো এসিডের ক্রম থেকে মন্তব্য করতে পারাটা তাই হবে অমূল্য এক ব্যপার। অবশ্যই ব্যপারটা কষ্টসাধ্য কিন্তু ইতিমধ্যেই এটি আলোর মুখ দেখাচ্ছে।
চেইন গ্যাং    
প্রোটিন ফোল্ডিং এর মত চমৎকার একটি বিষয়ে গবেষণার জন্য প্রথিতযশাদের মধ্যে একজন হচ্ছেন সিয়াটলের ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটন এর ডেভিড বেকার। গত ২০ বছর যাবত তিনি এবং তাঁর সহকর্মীরা ব্যবহার করে আসছেন রোজেটা  নামক একটি অত্যন্ত সূক্ষ্ম প্রোগ্রাম যেটি একটি প্রদত্ত প্রোটিনের সম্ভাব্য বেশ কয়েকটি আকার সম্পর্কে ধারণা দেয় এবং পরবর্তীতে সর্বাধিক স্থিতিশীল আকারটি নির্ণয় করার প্রচেষ্টার মাধ্যমে একদম বাস্তব আকারটি বের করে আনা হয়। ২০১৫ সালে তাঁরা অনুপস্থিত প্রোটিন ফ্যামিলির ৫৪ টির প্রতিনিধিত্বকারী সদস্যের গঠনের ধারণা দিয়েছেন। পরের মাসেই তাঁরা ৬১৪ টির গঠন সম্পর্কে পূর্বাভাস দেন।
একটি ক্ষুদ্র প্রোটিনও হাজার হাজার আকারে ফোল্ড করতে পারে যেগুলো সবই কম বেশি স্থিতিশীল। এই কাজগুলো করার জন্য মাইক্রোপ্রসেসর লাগে।
কেন এত গুরুত্বপূর্ন প্রোটিনের গঠন

ধরা যাক আলঝেইমার নামক অসুখটির কথা। আলঝেইমার মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে। কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্রোটিন এবং নিউরনগুলো মিস ফোল্ড হওয়া শুরু করে। এরপর এরা সঞ্চিত হয় নিউরনের বাইরে যাদেরকে বলা হয় অ্যামোলয়েড। অর্থাৎ অ্যামোলয়েড হচ্ছে মিস ফোল্ডেড প্রোটিনের গুচ্ছ। অ্যামোলয়েডের বৃদ্ধি বাড়ার সাথে সাথে নিউরনের উপর প্রভাব বিস্তার করে। নিউরনের যে কোন বার্তা পাঠানোর সক্ষমতা পরিবর্তিত হয় যার কারণে ডিমেনশিয়া এবং স্মৃতি নষ্ট হয়ে যায়। 




তথ্যসূত্র 

শনিবার, ১১ মার্চ, ২০১৭

Stressed? How is your body responding?

এই পোস্টে আমরা আলোচনা করবো সাডেন মেন্টাল স্ট্রেস (Sudden mental stress) , বা হঠাৎ অপ্রত্যাশিতভাবে সৃষ্টি হওয়া মানসিক চাপে কি কি পরিবর্তন হয় আমাদের শরীরে - এই বিষয়ে।




আমাদের অনেকের জীবনেই স্ট্রেস নিত্যসঙ্গী। আমরা সবাই একাধিকবার স্ট্রেসের মুখোমুখি হয়েছি। তাই আমরা এটাও ফিল করেছি যে, মানসিক চাপে থাকাকালীন সময়ে দুর্বলতা, ক্লান্তি, নিদ্রাহীনতাসহ অনেক শারীরিক পরিবর্তন হয়। কিন্তু কেন? 

প্রথমত, স্ট্রেসকে আমরা ২ ভাগে ভাগ করতে পারি। 

এক, আপনি ভালই ছিলেন, ঠিকঠাক মতই চলছিল আপনার জীবন। হঠাৎ কোন দুর্ঘটনা, কিংবা আতঙ্ক অথবা কোন অনাকাঙ্ক্ষিত কারণে তৈরি হল মানসিক চাপ। এটাকে বলা হবে Acute stress. অর্থাৎ, Acute stress তৈরি হয় অপ্রতাশিত এবং নতুন কোন নির্দিষ্ট ঘটনা বা পরিস্থিতি থেকে। যেমন, হঠাৎ রোড অ্যাকসিডেন্টের মুখোমুখি হতে গিয়ে বেঁচে যাওয়া, হঠাৎ কোন কারণে ভয় পাওয়া কিংবা প্রথমবারের মত অনেক মানুষের সামনে স্টেজ পারফরমেন্স, অথবা হয়ত কোন সম্পর্কের বিচ্ছেদ। মানে Acute stress হল immediate এবং short term। এজন্য একে "On the spot" টাইপ স্ট্রেসও বলা হয়।

দুই, Chronic stress । Chronic stress তৈরি হয় কোন ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে। যেমন, দীর্ঘদিন ধরে আপনার জীবনে বড় কোন সমস্যা চলছে। অনেকদিন যাবত আপনি মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। অনেকদিন ধরে চলতে থাকা এধরনের স্ট্রেসকে আমরা বলি Chronic stress. 

অনেক বিজ্ঞানীরা মনে করেন, আমাদের স্ট্রেস রেসপন্স সিস্টেম (stress response system) দীর্ঘ সময় ধরে সচল থাকতে পারে না। যেহেতু Chronic stress এ বারবার স্ট্রেস রেসপন্স সিস্টেম কাজ করতে থাকে, তাই আমাদের শরীরের স্বাভাবিক অনেক প্রক্রিয়া দুর্বল হয়ে যায়, স্বাস্থ্য ভেঙ্গে যেতে দেখা যায়। তাই বলা হয় Chronic stress আমাদের শরীর এবং মনে "wear and tear", অর্থাৎ কালক্রমে ধীরে ধীরে ক্ষয় তৈরি করতে পারে।

আবার Chronic stress অনেক ধরণের শারীরিক সমস্যার সাথে সংযোগ তৈরি করতে পারে। যেমন হার্ট ডিজিজ, উচ্চ রক্তচাপ, হাই কোলেস্টেরল, টাইপ টু ডায়বেটিস ইত্যাদি। যেমন, কারো পরিবারে যদি এসব কোন সমস্যার ইতিহাস থেকে থাকে, মানে বংশগত ভাবে এসব কোন একটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, Chronic stress সেই সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দিতে পারে। আর যদি ইতোমধ্যে এগুলোর কোন একটি থেকে থাকে, তবে Chronic stress হয়ে উঠতে পারে আরও ভয়ংকর!

আমরা মূলত এই পোস্টে  Acute stress নিয়ে, এবং তাতে শরীরের কি কি প্রতিক্রিয়া হয়, তা নিয়ে কথা বলব। 


স্ট্রেস মানসিক হলেও শরীরের উপর এর অনেক প্রভাব আছে, যেটা হয় মূলত স্ট্রেসকে ম্যানেজ করতে গিয়ে। 

Stress factor গুলোকে বলা হয় stressor. স্ট্রেস সৃষ্টি হওয়ার পর আমাদের শরীরের প্রধান উদ্দেশ্য থাকে স্ট্রেস থেকে মুক্ত হওয়া। এ জন্য Acute stress এ এক ধরণের রেসপন্স সিস্টেম কাজ করে যাকে বলা হয় "Fight or Flight" রেসপন্স। অর্থাৎ হয় লড়াই, নয় পলায়ন। এই সিস্টেমে ব্রেন এবং এন্ডোক্রাইন সিস্টেম - দুটোই কাজ করে।

একদিকে সিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম, যার অংশ হল ব্রেন এবং স্পাইনাল কর্ড, রেসপন্স শুরু করে। ফলে হার্ট দ্রুত পাম্প করে, রক্তচাপ বেড়ে যায়, কারণ তখন শরীরের বেশি পরিমাণে অক্সিজেন এবং গ্লুকোজ দরকার হয়। শ্বসনের হার বেড়ে গিয়ে টিস্যুতে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন সরবরাহ করতে, এবং তৈরি হওয়া প্রচুর পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড বের করে দিতে সাহায্য করে। আমরা ভয় পেলে বা আতঙ্কিত হলে কিংবা টেনশন হলে আমাদের হার্টবিট বেড়ে যাওয়ার এই হল এক কারণ।

আবার যাদের Irritable Bowel Syndrome (IBS) আছে, তাদের ক্ষেত্রে স্ট্রেসের প্রভাব রয়েছে। স্ট্রেসড কন্ডিশনে ব্রেন আমাদের অন্ত্রের সাথেও কানেকশন তৈরি করে, যা অন্ত্রের ভিতর দিয়ে খাবার পরিবহনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে, এবং অন্ত্রের সেন্সেটিভিটিকে বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া স্ট্রেসড অবস্থায় অন্ত্রে থাকা ব্যাকটেরিয়াদের কম্পজিশন নষ্ট হয়ে যেতে পারে, যার প্রভাব পড়তে পারে খাবার হজমে।

অন্যদিকে, এন্ডোক্রাইন সিস্টেম কাজ শুরু করে। আমাদের এন্ডোক্রাইন সিস্টেমের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল অ্যাড্রেনাল গ্ল্যান্ড, যা থাকে আমাদের কিডনির ঠিক উপরের দিকে। স্ট্রেস তৈরি হওয়ার পর অ্যাড্রেনাল গ্ল্যান্ড এর অ্যাড্রেনাল মেডুলা থেকে নিঃসৃত হয় catecholamine হরমোন, যাদের নাম এপিনেফ্রিন(epinephrine) এবং নরএপিনেফ্রিন(nor-epinephrine)। এদেরকে adrenaline এবং noradrenaline হরমোনও বলে। এরাই হল রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া, হার্ট দ্রুত পাম্প করার ক্ষেত্রে প্রধান কমিউনিকেটর। এরা ব্লাড ভেসেল সংকোচন (vasoconstriction) করে প্রয়োজনীয় অংশে, যেমন ব্রেন এবং মাসলে, অক্সিজেন আর গ্লুকোজ পরিবহন বাড়িয়ে দেয়, এবং একই সাথে যে কাজগুলো acute স্ট্রেসড কন্ডিশনে অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, (যেমন digestion), তাদেরকে সাময়িকভাবে প্রতিহত করে রাখে।

এছাড়াও অ্যাড্রেনাল কর্টেক্স থেকে করটিসল (cortisol) নামে একধরনের স্টেরয়েড জাতীয় হরমোন নিঃসৃত হয়, যা ধারণা করা হয়, অ্যামিনো অ্যাসিড আর ফ্যাট সরবরাহ বাড়িয়ে দেয়, যেন ওই মুহূর্তে প্রয়োজনীয় অন্যান্য উপাদান, যেমন গ্লুকোজ, তৈরি হতে পারে, এবং এনার্জি সাপ্লাই করতে পারে। আবার cortisol নিঃসরণ হওয়ার পর ব্লাড ভেসেলের এন্ডোথ্যালিয়াম সেলগুলো (যারা ব্লাড ভেসেলের ভিতরের ত্বক তৈরি করে) ঠিকমত কাজ করতে পারে না, যাকে এখন বিজ্ঞানীরা atherosclerosis (cholesterol deposition in artery) শুরু হওয়ার প্রথম ধাপ বলে মনে করেন। যা থেকে পরবর্তীতে হার্ট অ্যাটাক, বা স্ট্রোক পর্যন্ত হতে পারে!

Cortisol আরেকধরনের কাজও করে। স্ট্রেসড অবস্থায় অনেকে তুলনামূলক বেশি পরিমাণে খায়, বা খাওয়ার ইচ্ছা অনুভব করে। এর পেছনে ভূমিকা আছে cortisol এর! Cortisol শরীরকে নতুন করে এনার্জি সোর্স তৈরি করতে সিগন্যাল দেয়, এবং এনার্জি সমৃদ্ধ খাবার, যেমন ফ্যাট জাতীয় খাবার খেতে প্রভাবিত করে।

"Fight or Flight" রেসপন্স ছাড়াও আরেক ধরণের রেসপন্স দেখা যায় স্ট্রেস সৃষ্টি হলে, যাকে বলা হয় "Tend and Befriend" রেসপন্স।

"Tend and Befriend" রেসপন্সে অক্সিটোসিন (oxytocin) নামক এক হরমোন নিঃসৃত হয়। এই রেসপন্সে কাজটা হয় আগের রেসপন্সের বিপরীত। এবার আর যুদ্ধ বা পালিয়ে বেড়ানো নয়। এই রেসপন্স মানিয়ে নেয়ার।

মজার ব্যাপার হচ্ছে,  "Fight or Flight" রেসপন্সকে পুরুষদের প্রাইমারী রেসপন্স বলা হয়, এবং নারীরা "Tend and Befriend" রেসপন্স বেশি প্রদর্শন করেন। এটি শুধু সাইকোলজিক্যাল নয়, এর বায়োকেমিক্যাল ব্যাখ্যাও রয়েছে।

মেয়েদের এস্ট্রোজেন (Estrogen) নামের এক হরমোন থাকে, যা মূলত female sex hormone। এই এস্ট্রোজেন অক্সিটোসিনের প্রভাবকে বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। তাই দেখা যায় নারীরা স্ট্রেসড কন্ডিশনে পুরুষদের তুলনায় বেশি কোমল এবং বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করে থাকেন।

স্ট্রেসড অবস্থায় নারীদের এই যত্নবান আচরণ তাদের সন্তানদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। সন্তানদের প্রতি মায়েদের এই বেশি কেয়ারিং, তাদের স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে!

আবার যখন কোন মহিলা স্ট্রেসড থাকেন, "Tend and Befriend" রেসপন্সে দেখা যায় তিনি স্ট্রেস ম্যানেজ করতে বেশি পরিমাণ সামাজিক আচরণ করেন, অন্যান্য মহিলাদের সাথে মিশতে চান। রিসার্চ বলছে, স্ট্রেসে থাকাকালীন মহিলারা পুরুষদের তুলনায় বন্ধু এবং পরিবারের সঙ্গ বেশি করে পেতে চান। এমনকি কর্মস্থলে কাজের চাপ কিংবা অন্যান্য সমস্যা থাকার সময় মায়েদের তাদের সন্তানদের প্রতি বেশি যত্নশীল হতে দেখা যায়, যেখানে একই পরিস্থিতিতে বাবারা পরিবারের সাথে দূরত্ব রেখে চলতে পছন্দ করেন!

এর সবই "Tend and Befriend" রেসপন্সের কারসাজি।

Hans Selye নামের একজন স্ট্রেসের ক্ষেত্রে একটি নতুন টার্ম ব্যবহার করেছেন, যাকে বলা হয় General Adaptation Syndrome (G.A.S.)। এতে তিনি তিনটি স্টেজের কথা বলেছেন।

প্রথমত, Alarm stage। এই স্টেজে বডি প্রাথমিক রেসপন্স শুরু করে, যেমন হার্টবিট বেড়ে যাওয়া, fight কিংবা flight এর জন্য প্রস্তুত হওয়া ইত্যাদি।

দ্বিতীয়ত, Resistance stage, যাতে শরীর প্রতিরোধ করতে শুরু করে স্ট্রেসড কন্ডিশনকে। যেমন ব্লাড প্রেসার বেড়ে যাওয়া, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া, স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণ ইত্যাদি।

শেষ স্টেজ হচ্ছে, Exhaustion stage। এই স্টেজে আমাদের সবধরনের শারীরিক প্রতিক্রিয়ার ফলাফল হিসেবে অবসাদ সৃষ্টি হয়, ক্লান্তি অনুভূত হয়।

আমরা সবাই লাইফে অনেকবার অনেক মানসিক চাপের সম্মুখীন হই, তার প্রভাব শুধু মনে হয়, পড়ে আমাদের শরীরেও। কিভাবে আমাদের শরীর সেই স্ট্রেসকে কন্ট্রোল করে তা নিয়ে এই ছিল প্রাথমিক কিছু ধারণা।

পরবর্তী কোন পোস্টে কথা হবে জীবনের অন্য কোন মজার রহস্য নিয়ে। ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন, চিন্তামুক্ত জীবনযাপনের চেষ্টা করুন। যেকোনো ধরণের মতামত জানান।


ধন্যবাদ :)

কৃতজ্ঞতা (reference) - Khan academy, Wikipedia, Youtube