এই ব্লগের অন্য একটি পোস্টে আমরা হোমিওস্ট্যাসিস নিয়ে বেসিক কিছু আলোচনা করেছিলাম। আজ পজিটিভ ফিডব্যাক মেকানিজম (Positive Feedback Mechanism) নিয়ে আরও কিছু কথা বলব।
এই লেখাটি পড়ার আগে তাই পূর্বের পোস্ট পড়ে নেয়াটা বেটার হবে -
পজিটিভ ফিডব্যাক মেকানিজম কোন সিস্টেমের, বা বায়োলজির দিক থেকে বলতে গেলে প্রাণীদেহের কোনরকম পরিবর্তনকে পজিটিভ দিকে টেনে নিয়ে যায়, অর্থাৎ পরিবর্তনটাকে প্রশমিত করার বদলে বাড়িয়ে দেয়।
আপাতদৃষ্টিতে এই মেকানিজমকে ভীষণ ভয়ংকর মনে হলেও সব ক্ষেত্রে কিন্তু তা নয়। আবার কিছু ক্ষেত্রে যে ভয়ংকর নয় সেটা বললেও ভুল বলা হবে। এর দুদিকই ছোট কিছু উদাহরণ দিয়ে বলার চেষ্টা করছি।
গুণগান করার আগে ভয়ংকর দিকটাই বলছি। আমাদের, মানে স্বাভাবিক মানুষের হৃৎপিন্ড (heart) প্রতি মিনিটে প্রায় ৫ লিটার রক্ত পাম্প করে। ধরা যাক একজন মানুষের শরীর থেকে হঠাৎই অ্যাক্সিডেন্টালি ২ লিটার রক্ত বের হয়ে গেল। তাতে শরীরে রক্তের পরিমাণ অনেকটা কমে যাবে, এবং তা হার্টের ঠিকঠাক কাজ করার জন্য উপযুক্ত নয়। অর্থাৎ, রক্তের পরিমাণ অনেক কমে যাওয়ায় হার্টে ব্লাড সাপ্লাই হবে কম এবং তাই হার্ট আগের মত পাম্প করতে পারবে না। যার ফলাফল হবে ব্লাড প্রেসার কমে যাওয়া। ব্লাড প্রেসার কমে যাওয়াতে হার্ট মাসলেও ব্লাড ফ্লো কম হবে। তাতে হার্ট তপাম্প করার জন্য আগের মত পর্যাপ্ত শক্তি পাবে না, এবং দুর্বল হয়ে যাবে তুলনামূলক। দুর্বল হার্টের পাম্প করার ক্ষমতা আগের চেয়েও কম হবে, এবং সেজন্য হার্ট মাসলে করোনারি ব্লাড ফ্লো আগের চেয়ে আরও কমে যাবে। এভাবে হার্ট আগের চেয়েও বেশি দুর্বল হবে, এবং পাম্প করবে আরও কম। যদি উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা না করা হয় তাহলে এই সাইকেল ততক্ষণ চলতে থাকবে যতক্ষণ না হার্ট পাম্পিং একেবারে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, মানে মৃত্য হচ্ছে।
এই প্রতিটা সাইকেল কিন্তু পজিটিভ ফিডব্যাকের ফলাফল, কারণ পরিবর্তনের শুরুটাই আরো একই পরিবর্তনের দিকে যেতে বাধ্য করছে।
বিপদজনক হলেও, যতক্ষণ পজিটিভ ফিডব্যাক খুব বেশি ভূমিকা না ফেলে, নেগেটিভ ফিডব্যাক কিন্তু তাকে ওভারকাম করতে পারে। যেমন, পূর্বের দুর্ভাগা ব্যক্তিটি যদি ২ লিটারের বদলে ১ লিটার রক্ত হারাতো, তাহলে স্বাভাবিক নেগেটিভ ফিডব্যাক মেকানিজম যা কার্ডিয়াক আউটপুট ও আর্টারিয়াল প্রেসারকে কন্ট্রোল করে, সেটা পজিটিভ ফিডব্যাককে ওভারব্যালেন্স করতে পারত, এবং বেচারাকে মরতে হত না।
এই গেল পজিটিভ ফিডব্যাকের কুফলের উদাহরণ। এর সুফলও যে বেশ আছে তা আগের পোস্টে বলেছিলাম (উপরের লিংক)। আমাদের যাদের জন্ম নরমাল ডেলিভারিতে হয়েছে, তাদের কিন্তু এই পজিটিভ ফিডব্যাক মেকানিজমের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।
শরীরের কোথাও কেটে গেলে যে রক্ত জমাট বাঁধে, সেটাও কিন্তু এই মেকানিজমের মাধ্যমেই। রক্ত জমাট বাঁধার জন্য কিছু clotting factors থাকে, যারা আসলে বিভিন্ন এনজাইম, এবং তারা থাকে নিস্ক্রিয় অবস্থায়। যখনই কোথাও কেটে রক্ত বের হয়, তখন সেখানে কিছু ফ্যাক্টর সক্রিয় হয় ,মানে একটিভেটেড হয়। একটিভেটেড ফ্যাক্টর গুলো অন্য আরেকটা ক্লটিং ফ্যাক্টরকে একটিভেট করে, আবার সেই ফ্যাক্টর অন্য আরেকটাকে। এভাবে চলতে থাকে বারবার যতক্ষণ না রক্ত জমাট বাঁধতে বাঁধতে রক্তপাত বন্ধ হচ্ছে। এটাও পজিটিভ ফিডব্যাক।
আরেকটা উদাহরণ দিচ্ছি । নার্ভ ইমপালসের (nerve impulse) মাধ্যমে নার্ভ সিগনালকে জায়গামত পৌঁছে দিতেও ভূমিকা আছে পজিটিভ ফিডব্যাক মেকানিজমের। নার্ভ ইমপালস নিয়ে একটু ঘাঁটাঘাঁটি করলেই বোঝা যাবে, নার্ভ সিগনাল পরিবাহিত হয় নার্ভ ফাইবারে থাকা সোডিয়াম গেট, পটাশিয়াম গেট আর সোডিয়াম-পটাশিয়াম পাম্পের মাধ্যমে। যখন নার্ভ ফাইবারে কোন সংবাদ আসল, তখন একদম অল্প সোডিয়াম আয়ন সোডিয়াম চ্যানেল দিয়ে নার্ভ ফাইবারের ভিতরে ঢুকে যায়। এতে নার্ভের স্বাভাবিক মেমব্রেন পটেনশিয়ালের পরিবর্তন হয়, এবং এই পরিবর্তন অন্য সোডিয়াম চ্যানেলগুলোকেও ওপেন করে দেয়। এতে মেমব্রেন পটেনশিয়ালের পরিবর্তন আরো বেড়ে যায় আর সাথে সোডিয়াম চ্যানেলের খুলতে থাকাও। (সোডিয়াম গেটগুলো আসলে ভোল্টেজ গেট, মানে ভোল্টেজের ডিফারেন্সের উপরে এদের বন্ধ হওয়া বা খোলা ডিপেন্ড করে)। এটা চলতে থাকে যতক্ষণ নানা নার্ভ সিগন্যাল নার্ভ ফাইবারের শেষ পর্যন্ত যাচ্ছে। এভাবে ছোট একটু সোডিয়াম লিকেজ নার্ভ সিগনাল কন্ডাক্ট করে পজিটিভ ফিডব্যাক মেকানিজমের মাধ্যমে।
তার মানে পজিটিভ ফিডব্যাকের ভালো কিছু দিক যে আছে, এবং সেগুলো যে বেশ গুরুত্বপূর্ণ তা আমরা বুঝলাম আশা করি। একটা কথা আছে, "Positive feedback itself is part of an overall negative feedback process." যেমন রক্ত জমাট বাঁধার কথাটাই ধরা যাক, হোক কাজটা পজিটিভ ফিডব্যাকের মাধ্যমে, কিন্তু রক্ত জমাট বাঁধার কারণ তো শরীরের নরমাল ব্লাড ভলিউমকে ঠিক রাখার জন্যই। মানে নেগেটিভ ফিডব্যাক কাজ করছে পজিটিভ ফিডব্যাকের সাহায্য নিয়ে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন