Followers

শনিবার, ১১ মার্চ, ২০১৭

Stressed? How is your body responding?

এই পোস্টে আমরা আলোচনা করবো সাডেন মেন্টাল স্ট্রেস (Sudden mental stress) , বা হঠাৎ অপ্রত্যাশিতভাবে সৃষ্টি হওয়া মানসিক চাপে কি কি পরিবর্তন হয় আমাদের শরীরে - এই বিষয়ে।




আমাদের অনেকের জীবনেই স্ট্রেস নিত্যসঙ্গী। আমরা সবাই একাধিকবার স্ট্রেসের মুখোমুখি হয়েছি। তাই আমরা এটাও ফিল করেছি যে, মানসিক চাপে থাকাকালীন সময়ে দুর্বলতা, ক্লান্তি, নিদ্রাহীনতাসহ অনেক শারীরিক পরিবর্তন হয়। কিন্তু কেন? 

প্রথমত, স্ট্রেসকে আমরা ২ ভাগে ভাগ করতে পারি। 

এক, আপনি ভালই ছিলেন, ঠিকঠাক মতই চলছিল আপনার জীবন। হঠাৎ কোন দুর্ঘটনা, কিংবা আতঙ্ক অথবা কোন অনাকাঙ্ক্ষিত কারণে তৈরি হল মানসিক চাপ। এটাকে বলা হবে Acute stress. অর্থাৎ, Acute stress তৈরি হয় অপ্রতাশিত এবং নতুন কোন নির্দিষ্ট ঘটনা বা পরিস্থিতি থেকে। যেমন, হঠাৎ রোড অ্যাকসিডেন্টের মুখোমুখি হতে গিয়ে বেঁচে যাওয়া, হঠাৎ কোন কারণে ভয় পাওয়া কিংবা প্রথমবারের মত অনেক মানুষের সামনে স্টেজ পারফরমেন্স, অথবা হয়ত কোন সম্পর্কের বিচ্ছেদ। মানে Acute stress হল immediate এবং short term। এজন্য একে "On the spot" টাইপ স্ট্রেসও বলা হয়।

দুই, Chronic stress । Chronic stress তৈরি হয় কোন ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে। যেমন, দীর্ঘদিন ধরে আপনার জীবনে বড় কোন সমস্যা চলছে। অনেকদিন যাবত আপনি মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। অনেকদিন ধরে চলতে থাকা এধরনের স্ট্রেসকে আমরা বলি Chronic stress. 

অনেক বিজ্ঞানীরা মনে করেন, আমাদের স্ট্রেস রেসপন্স সিস্টেম (stress response system) দীর্ঘ সময় ধরে সচল থাকতে পারে না। যেহেতু Chronic stress এ বারবার স্ট্রেস রেসপন্স সিস্টেম কাজ করতে থাকে, তাই আমাদের শরীরের স্বাভাবিক অনেক প্রক্রিয়া দুর্বল হয়ে যায়, স্বাস্থ্য ভেঙ্গে যেতে দেখা যায়। তাই বলা হয় Chronic stress আমাদের শরীর এবং মনে "wear and tear", অর্থাৎ কালক্রমে ধীরে ধীরে ক্ষয় তৈরি করতে পারে।

আবার Chronic stress অনেক ধরণের শারীরিক সমস্যার সাথে সংযোগ তৈরি করতে পারে। যেমন হার্ট ডিজিজ, উচ্চ রক্তচাপ, হাই কোলেস্টেরল, টাইপ টু ডায়বেটিস ইত্যাদি। যেমন, কারো পরিবারে যদি এসব কোন সমস্যার ইতিহাস থেকে থাকে, মানে বংশগত ভাবে এসব কোন একটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, Chronic stress সেই সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দিতে পারে। আর যদি ইতোমধ্যে এগুলোর কোন একটি থেকে থাকে, তবে Chronic stress হয়ে উঠতে পারে আরও ভয়ংকর!

আমরা মূলত এই পোস্টে  Acute stress নিয়ে, এবং তাতে শরীরের কি কি প্রতিক্রিয়া হয়, তা নিয়ে কথা বলব। 


স্ট্রেস মানসিক হলেও শরীরের উপর এর অনেক প্রভাব আছে, যেটা হয় মূলত স্ট্রেসকে ম্যানেজ করতে গিয়ে। 

Stress factor গুলোকে বলা হয় stressor. স্ট্রেস সৃষ্টি হওয়ার পর আমাদের শরীরের প্রধান উদ্দেশ্য থাকে স্ট্রেস থেকে মুক্ত হওয়া। এ জন্য Acute stress এ এক ধরণের রেসপন্স সিস্টেম কাজ করে যাকে বলা হয় "Fight or Flight" রেসপন্স। অর্থাৎ হয় লড়াই, নয় পলায়ন। এই সিস্টেমে ব্রেন এবং এন্ডোক্রাইন সিস্টেম - দুটোই কাজ করে।

একদিকে সিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম, যার অংশ হল ব্রেন এবং স্পাইনাল কর্ড, রেসপন্স শুরু করে। ফলে হার্ট দ্রুত পাম্প করে, রক্তচাপ বেড়ে যায়, কারণ তখন শরীরের বেশি পরিমাণে অক্সিজেন এবং গ্লুকোজ দরকার হয়। শ্বসনের হার বেড়ে গিয়ে টিস্যুতে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন সরবরাহ করতে, এবং তৈরি হওয়া প্রচুর পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড বের করে দিতে সাহায্য করে। আমরা ভয় পেলে বা আতঙ্কিত হলে কিংবা টেনশন হলে আমাদের হার্টবিট বেড়ে যাওয়ার এই হল এক কারণ।

আবার যাদের Irritable Bowel Syndrome (IBS) আছে, তাদের ক্ষেত্রে স্ট্রেসের প্রভাব রয়েছে। স্ট্রেসড কন্ডিশনে ব্রেন আমাদের অন্ত্রের সাথেও কানেকশন তৈরি করে, যা অন্ত্রের ভিতর দিয়ে খাবার পরিবহনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে, এবং অন্ত্রের সেন্সেটিভিটিকে বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া স্ট্রেসড অবস্থায় অন্ত্রে থাকা ব্যাকটেরিয়াদের কম্পজিশন নষ্ট হয়ে যেতে পারে, যার প্রভাব পড়তে পারে খাবার হজমে।

অন্যদিকে, এন্ডোক্রাইন সিস্টেম কাজ শুরু করে। আমাদের এন্ডোক্রাইন সিস্টেমের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল অ্যাড্রেনাল গ্ল্যান্ড, যা থাকে আমাদের কিডনির ঠিক উপরের দিকে। স্ট্রেস তৈরি হওয়ার পর অ্যাড্রেনাল গ্ল্যান্ড এর অ্যাড্রেনাল মেডুলা থেকে নিঃসৃত হয় catecholamine হরমোন, যাদের নাম এপিনেফ্রিন(epinephrine) এবং নরএপিনেফ্রিন(nor-epinephrine)। এদেরকে adrenaline এবং noradrenaline হরমোনও বলে। এরাই হল রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া, হার্ট দ্রুত পাম্প করার ক্ষেত্রে প্রধান কমিউনিকেটর। এরা ব্লাড ভেসেল সংকোচন (vasoconstriction) করে প্রয়োজনীয় অংশে, যেমন ব্রেন এবং মাসলে, অক্সিজেন আর গ্লুকোজ পরিবহন বাড়িয়ে দেয়, এবং একই সাথে যে কাজগুলো acute স্ট্রেসড কন্ডিশনে অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, (যেমন digestion), তাদেরকে সাময়িকভাবে প্রতিহত করে রাখে।

এছাড়াও অ্যাড্রেনাল কর্টেক্স থেকে করটিসল (cortisol) নামে একধরনের স্টেরয়েড জাতীয় হরমোন নিঃসৃত হয়, যা ধারণা করা হয়, অ্যামিনো অ্যাসিড আর ফ্যাট সরবরাহ বাড়িয়ে দেয়, যেন ওই মুহূর্তে প্রয়োজনীয় অন্যান্য উপাদান, যেমন গ্লুকোজ, তৈরি হতে পারে, এবং এনার্জি সাপ্লাই করতে পারে। আবার cortisol নিঃসরণ হওয়ার পর ব্লাড ভেসেলের এন্ডোথ্যালিয়াম সেলগুলো (যারা ব্লাড ভেসেলের ভিতরের ত্বক তৈরি করে) ঠিকমত কাজ করতে পারে না, যাকে এখন বিজ্ঞানীরা atherosclerosis (cholesterol deposition in artery) শুরু হওয়ার প্রথম ধাপ বলে মনে করেন। যা থেকে পরবর্তীতে হার্ট অ্যাটাক, বা স্ট্রোক পর্যন্ত হতে পারে!

Cortisol আরেকধরনের কাজও করে। স্ট্রেসড অবস্থায় অনেকে তুলনামূলক বেশি পরিমাণে খায়, বা খাওয়ার ইচ্ছা অনুভব করে। এর পেছনে ভূমিকা আছে cortisol এর! Cortisol শরীরকে নতুন করে এনার্জি সোর্স তৈরি করতে সিগন্যাল দেয়, এবং এনার্জি সমৃদ্ধ খাবার, যেমন ফ্যাট জাতীয় খাবার খেতে প্রভাবিত করে।

"Fight or Flight" রেসপন্স ছাড়াও আরেক ধরণের রেসপন্স দেখা যায় স্ট্রেস সৃষ্টি হলে, যাকে বলা হয় "Tend and Befriend" রেসপন্স।

"Tend and Befriend" রেসপন্সে অক্সিটোসিন (oxytocin) নামক এক হরমোন নিঃসৃত হয়। এই রেসপন্সে কাজটা হয় আগের রেসপন্সের বিপরীত। এবার আর যুদ্ধ বা পালিয়ে বেড়ানো নয়। এই রেসপন্স মানিয়ে নেয়ার।

মজার ব্যাপার হচ্ছে,  "Fight or Flight" রেসপন্সকে পুরুষদের প্রাইমারী রেসপন্স বলা হয়, এবং নারীরা "Tend and Befriend" রেসপন্স বেশি প্রদর্শন করেন। এটি শুধু সাইকোলজিক্যাল নয়, এর বায়োকেমিক্যাল ব্যাখ্যাও রয়েছে।

মেয়েদের এস্ট্রোজেন (Estrogen) নামের এক হরমোন থাকে, যা মূলত female sex hormone। এই এস্ট্রোজেন অক্সিটোসিনের প্রভাবকে বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। তাই দেখা যায় নারীরা স্ট্রেসড কন্ডিশনে পুরুষদের তুলনায় বেশি কোমল এবং বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করে থাকেন।

স্ট্রেসড অবস্থায় নারীদের এই যত্নবান আচরণ তাদের সন্তানদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। সন্তানদের প্রতি মায়েদের এই বেশি কেয়ারিং, তাদের স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে!

আবার যখন কোন মহিলা স্ট্রেসড থাকেন, "Tend and Befriend" রেসপন্সে দেখা যায় তিনি স্ট্রেস ম্যানেজ করতে বেশি পরিমাণ সামাজিক আচরণ করেন, অন্যান্য মহিলাদের সাথে মিশতে চান। রিসার্চ বলছে, স্ট্রেসে থাকাকালীন মহিলারা পুরুষদের তুলনায় বন্ধু এবং পরিবারের সঙ্গ বেশি করে পেতে চান। এমনকি কর্মস্থলে কাজের চাপ কিংবা অন্যান্য সমস্যা থাকার সময় মায়েদের তাদের সন্তানদের প্রতি বেশি যত্নশীল হতে দেখা যায়, যেখানে একই পরিস্থিতিতে বাবারা পরিবারের সাথে দূরত্ব রেখে চলতে পছন্দ করেন!

এর সবই "Tend and Befriend" রেসপন্সের কারসাজি।

Hans Selye নামের একজন স্ট্রেসের ক্ষেত্রে একটি নতুন টার্ম ব্যবহার করেছেন, যাকে বলা হয় General Adaptation Syndrome (G.A.S.)। এতে তিনি তিনটি স্টেজের কথা বলেছেন।

প্রথমত, Alarm stage। এই স্টেজে বডি প্রাথমিক রেসপন্স শুরু করে, যেমন হার্টবিট বেড়ে যাওয়া, fight কিংবা flight এর জন্য প্রস্তুত হওয়া ইত্যাদি।

দ্বিতীয়ত, Resistance stage, যাতে শরীর প্রতিরোধ করতে শুরু করে স্ট্রেসড কন্ডিশনকে। যেমন ব্লাড প্রেসার বেড়ে যাওয়া, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া, স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণ ইত্যাদি।

শেষ স্টেজ হচ্ছে, Exhaustion stage। এই স্টেজে আমাদের সবধরনের শারীরিক প্রতিক্রিয়ার ফলাফল হিসেবে অবসাদ সৃষ্টি হয়, ক্লান্তি অনুভূত হয়।

আমরা সবাই লাইফে অনেকবার অনেক মানসিক চাপের সম্মুখীন হই, তার প্রভাব শুধু মনে হয়, পড়ে আমাদের শরীরেও। কিভাবে আমাদের শরীর সেই স্ট্রেসকে কন্ট্রোল করে তা নিয়ে এই ছিল প্রাথমিক কিছু ধারণা।

পরবর্তী কোন পোস্টে কথা হবে জীবনের অন্য কোন মজার রহস্য নিয়ে। ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন, চিন্তামুক্ত জীবনযাপনের চেষ্টা করুন। যেকোনো ধরণের মতামত জানান।


ধন্যবাদ :)

কৃতজ্ঞতা (reference) - Khan academy, Wikipedia, Youtube

বৃহস্পতিবার, ২ মার্চ, ২০১৭

Irritable Bowel Syndrome (IBS) আসলে কি?

এই পোস্টে আমরা জানার চেষ্টা করবো IBS বা Irritable Bowel Syndrome সম্পর্কে।


প্রথমে আমরা একটু দেখি, কেন ব্যাপারটাকে "disease" না বলে "Syndrome" বলা হচ্ছে!

আসলে Syndrome শব্দটা আমরা তখন ব্যবহার করি যখন অনেকগুলো শারীরিক লক্ষণ বা উপসর্গ মিলে একটা ডিজিজ বা ডিজঅর্ডারকে নির্দেশ করে। সহজ কথায়, একটা কন্ডিশন যখন প্রকাশ পাচ্ছে অনেকগুলো লক্ষণের মাধ্যমে। Wikipedia কি বলছে সেটা দেখা যাক -

"A syndrome is a set of medical signs and symptoms that are correlated with each other."  

নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে IBS- Bowel বা অন্ত্রের সাথে সম্পর্কিত। এটা মূলত large intestine (colon) বা বৃহদান্ত্রকে এফেক্ট করে। এবং এটিকে ক্রনিক কন্ডিশন বলা হচ্ছে, কারণ এটি একটি দীর্ঘকালীন সমস্যা, যা থাকে বছরের পর বছর। 

এই Irritable Bowel Syndrome এর লক্ষণগুলোও সত্যিই irritating! IBS এর প্রথম উপসর্গই হচ্ছে নিয়ম করে সময়ে-অসময়ে বারবার পেটে ব্যাথা। মূলত এতে অন্ত্রের নিজস্ব যে তৎপরতা বা নিজস্ব কার্যক্ষমতার প্যাটার্ন পরিবর্তন হয়ে যায়। ফলাফল হিসেবে ডায়রিয়া কিংবা কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা এমনকি দুটোই দেখা দিতে পারে। আবার IBS আক্রান্ত এমন মানুষও আছেন যাদের এ দুটোর কোনটাই হয় না। এছাড়া আছে abdominal cramping, পেট ফোলা অনুভুত হওয়া, গ্যাস তৈরি হওয়া, কখনও পায়খানার সাথে মিউকাস দেখা যাওয়া, বমিভাব ইত্যাদি। 

দুঃখের বিষয় হচ্ছে বায়োলজিক্যাল ঠিক কি কারণ রয়েছে এই সমস্যার পিছনে তা এখনও পুরোপুরি জানা সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন গবেষণায় কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে অন্ত্রের নিজস্ব কার্যক্ষমতার প্যাটার্ন পরিবর্তন, অন্ত্রে স্বাভাবিকের তুলনায় অধিক ব্যাকটেরিয়াল গ্রোথ, জিনগত কারণ, ফুড সেন্সেটিভিটি ইত্যাদিকে।

আমাদের অন্ত্রে যে পেশীগুলো থাকে তারা সংকোচন আর প্রসারণের মাধ্যমে খাবারকে পাকস্থলী থেকে অন্ত্র হয়ে মলদ্বার পর্যন্ত নিয়ে যায়। যদি কারো IBS থাকে, তাহলে এই পেশী সংকোচন আরও বেশি শক্তিশালী হতে পারে এবং তাতে খাবার খুব তাড়াতাড়িই পরিবাহিত হয়ে যায়, যার ফলে ডায়রিয়া দেখা যায়, আর তৈরি হয় গ্যাস এবং সাথে ফোলা ভাব অনুভুত হয়। আবার উল্টোটাও হতে পারে। অর্থাৎ এই সংকোচন যদি তুলনামূলক দুর্বল হয়, তবে খাবার পরিবহন হতে অনেক সময় নেবে, যার ফলাফল হিসেবে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। 

আরেকটু গভীর ব্যাখ্যায় যদি আমরা যাই, যাদের   IBS থাকে, তাদের অনেকের visceral hypersensitivity  দেখা যায়। অর্থাৎ তাদের অন্ত্রের সংবেদনশীলতা স্বাভাবিক মানুষের থেকে বেশি থাকে। অন্ত্রের গায়ে যে নার্ভগুলো থাকে, তাদের রেসপন্স থাকে অস্বাভাবিক রকমের বেশি- যার ফলে খাবার খাওয়ার সময় কিংবা পর অন্ত্রে প্রসারণ সৃষ্টি হয় বেশি, যা থেকে হয় ব্যাথা। মানে এর পেছনে ভূমিকা রয়েছে gastrointestinal nervous system এর। অন্ত্র এবং মস্তিস্কের মধ্যবর্তী সিগন্যাল দুর্বল হওয়ার ফলে স্বাভাবিক পরিপাকক্রিয়াতেও IBS আক্রান্ত ব্যাক্তির শরীর overreact করে, অর্থাৎ তৈরি করে ব্যাথা বা অন্যান্য সমস্যা। এমনকি অল্প পরিমাণ গ্যাস তৈরি হওয়া, যা স্বাভাবিক মানুষদের কোন সমস্যাই তৈরি করবে না,  IBS রোগীদের অতিসংবেদনশীলতার কারণে সেটাও হয়ে যায় কষ্টকর। 

আবার দেখা যায়, যেসব খাবারে short chain carbohydrate থাকে, যেমন lactose বা fructose, সেসব খাবার খেলেও IBS এর সমস্যা যাদের আছে তাদের উপরের লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারে। এর কারণ হচ্ছে, unabsorbed বা অশোষিত short chain carbohydrate সলিউটের মত কাজ করে, যা gastrointestinal wall দিয়ে লুমেনে পানি টেনে আনে, যার ফলে একদিকে visceral hypersensitivity থাকার কারণে শুরু হয় ব্যাথা আর পেটে খিঁচুনি, অন্যদিকে এই অতিরিক্ত পানির জন্য হয় ডায়রিয়া। এছাড়াও, সেই  carbohydrate, যারা কিনা শোষিত হতে পারে নি, তাদেরকে ব্যবহার করে অন্ত্রের দেয়ালে থাকা ব্যাকটেরিয়া , যার কারণে তৈরি হয় গ্যাস। এবং তাতে করেও তো ব্যাথাসহ বাকি কষ্টকর উপসর্গগুলো দেখা দিচ্ছেই।

এই তো গেল কিভাবে কি কারণে কি হচ্ছে। এছাড়া কিছু ফ্যাক্ট আছে যেসব IBS এর সমস্যাগুলোকে আরও প্রভাবিত করে, বলা যায় ইন্ধন যোগায়। এই ফ্যাক্টগুলো মানুষ ভেদে ভিন্ন হয়। যেমন-

প্রথমত হতে পারে স্ট্রেস। দিব্যি সুস্থ ছিলেন। হঠাৎ খবর এল আজ আপনার পরীক্ষার রেজাল্ট বের হয়েছে। যেই না শুরু হল টেনশন, অমনি শুরু হয়ে গেল পেটে ব্যাথা। কিংবা চাকরির প্রথম দিন আজ, ভালমত সেজেগুজে রেডি হয়েছেন। কিন্তু প্রথম দিন কেমন করে কি করবেন, কোন গোলমাল হয়ে যাবে কিনা এসব চিন্তা মাথায় আসতেই শুরু হয়ে গেল পেট ব্যাথা। হ্যাঁ, স্ট্রেস IBS এর লক্ষণগুলোকে প্রকট করে দিতে পারে। তবে এটা মাথায় রাখতে হবে, স্ট্রেস কিন্তু IBS হওয়ার জন্য দায়ী নয়। 

আরেকটি ফ্যাক্ট হল খাবার। যাদের IBS এর সমস্যা আছে, তাদের নির্দিষ্ট কিছু খাবার খেলে সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। মানুষ ভেদে অসহনীয় খাবারের তালিকা ভিন্ন হতে দেখা যায়।

মহিলাদের ক্ষেত্রে menstrual period এ IBS এর লক্ষণগুলো বেশি প্রকাশ হতে দেখা যায়। ধারণা করা হয় এর পিছনে হরমোনের ভূমিকা রয়েছে। এছাড়া আছে infectious diarrhea বা bacterial overgrowth এর মত অন্য কোন সমস্যা, যারা IBS এর সমস্যাগুলোকে প্রভাবিত করে।

এবার দেখি কাদের ক্ষেত্রে IBS বেশি দেখা যায়।

যাদের বয়স ৪৫ থেকে কম, তাদেরই এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। বয়স বৃদ্ধির সাথে IBS আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ব্যস্তানুপাতিক বলা চলে। উন্নত দেশগুলোতে প্রায় ১০-১৫% মানুষ IBS এ আক্রান্ত বলে বলা হয়, যার পরিমাণ সাউথ আমেরিকার দিকে বেশি। সবমিলিয়ে দেখা যায়, মহিলারা প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণে IBS এ ভোগে পুরুষদের তুলনায়।  এর পেছনে দায়ী থাকতে পারে হরমোন। যাদের পরিবারের কারো IBS ছিল, তারা রিস্কে আছেন বলে গবেষকরা মনে করেন।

সাধারনভাবে বলতে গেলে, IBS এর কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে কিছু ব্যাপার মাথায় রেখে চললে তুলনামুলকভাবে IBS এর অনেক সমস্যাকে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। IBS এর রোগীদের এমনভাবে চলা উচিত যাতে তাদের অন্ত্র স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে। অর্থাৎ, যার ঠিক যে যে কারণে সমস্যাগুলো দেখা দেয়, তারা যদি সেই ফ্যাক্টগুলোকে ম্যানেজ করে চলতে পারেন, তবেই অনেকটা ভালভাবে জীবনযাপন সম্ভব। যেমন আছে খাবার। IBS এ আক্রান্ত একজন একটু খেয়াল করে চললেই বুঝতে পারবেন ঠিক কি কি খাবার খেলে তার সমস্যা বেশি হচ্ছে। সেই খাবারগুলো খাদ্য তালিকা থেকে কমিয়ে দিয়েই অনেকাংশে সমস্যা কমিয়ে আনা সম্ভব। যেসব খাবারে short chain carbohydrate থাকে, যেমন আপেল, ফুলকপির মত কিছু খাবার এড়িয়ে চলা উপকারী হতে পারে। তবে হ্যাঁ, খাবারের তালিকা যেন সুষম হয়, তার দিকে খেয়াল রাখাও জরুরী।

তাছাড়া বলা হয়, আপনি কি খাচ্ছেন তার থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আপনি কখন খাচ্ছেন এবং কিভাবে খাচ্ছেন। আপনি যদি নিয়মিত নির্দিষ্ট সময় পর পর পরিমিত পরিমাণে খাবার খান, তাতে আপনার অন্ত্র আরও কার্যকরভাবে কাজ করতে সক্ষম হবে। তাছাড়া বেশি পরিমাণে আঁশ জাতীয় খাবার এবং প্রচুর পরিমাণে পানি বা তরল জাতীয় খাবার খেলে তা ডায়রিয়া এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দুটোর ক্ষেত্রেই লাভজনক হবে। 

অনেকক্ষেত্রে অ্যান্টিডিপ্রেশন জাতীয় ওষুধ সার্বিকভাবে সমস্যা কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। 

আর যেহেতু IBS এর সাথে অনেক ক্ষেত্রেই স্ট্রেস, দুশ্চিন্তা বা হতাশা জড়িত, চিন্তামুক্ত জীবনযাপন IBS এর সমস্যা কমাতে সাহায্য করবে। 

সবশেষে স্বস্তির বিষয় হল, IBS সাধারণত জীবন সংশয় ঘটায় না বা এতে মেজর কোন অর্গান ড্যামেজ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। IBS এ আক্রান্ত কোন ব্যাক্তির রোগ নির্ণয়ে তাই অনেক সময় কনফিউশনের সৃষ্টি হয়। কারণ দেখতে গেলে অন্ত্রে কোন ধরণের বাহ্যিক সমস্যা পাওয়া যায় না।

IBS নিয়ে এই ছিল সার্বিক কিছু কথাবার্তা।

ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন। আর আপনাদের মতামত কিংবা সমালোচনা সবসময়ই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই মতামত জানান। 

ধন্যবাদ :) 

কৃতজ্ঞতা (references) - Wikipedia, mayoclinic.org, Osmosis.org, youtube.