Followers

বৃহস্পতিবার, ২ মার্চ, ২০১৭

Irritable Bowel Syndrome (IBS) আসলে কি?

এই পোস্টে আমরা জানার চেষ্টা করবো IBS বা Irritable Bowel Syndrome সম্পর্কে।


প্রথমে আমরা একটু দেখি, কেন ব্যাপারটাকে "disease" না বলে "Syndrome" বলা হচ্ছে!

আসলে Syndrome শব্দটা আমরা তখন ব্যবহার করি যখন অনেকগুলো শারীরিক লক্ষণ বা উপসর্গ মিলে একটা ডিজিজ বা ডিজঅর্ডারকে নির্দেশ করে। সহজ কথায়, একটা কন্ডিশন যখন প্রকাশ পাচ্ছে অনেকগুলো লক্ষণের মাধ্যমে। Wikipedia কি বলছে সেটা দেখা যাক -

"A syndrome is a set of medical signs and symptoms that are correlated with each other."  

নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে IBS- Bowel বা অন্ত্রের সাথে সম্পর্কিত। এটা মূলত large intestine (colon) বা বৃহদান্ত্রকে এফেক্ট করে। এবং এটিকে ক্রনিক কন্ডিশন বলা হচ্ছে, কারণ এটি একটি দীর্ঘকালীন সমস্যা, যা থাকে বছরের পর বছর। 

এই Irritable Bowel Syndrome এর লক্ষণগুলোও সত্যিই irritating! IBS এর প্রথম উপসর্গই হচ্ছে নিয়ম করে সময়ে-অসময়ে বারবার পেটে ব্যাথা। মূলত এতে অন্ত্রের নিজস্ব যে তৎপরতা বা নিজস্ব কার্যক্ষমতার প্যাটার্ন পরিবর্তন হয়ে যায়। ফলাফল হিসেবে ডায়রিয়া কিংবা কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা এমনকি দুটোই দেখা দিতে পারে। আবার IBS আক্রান্ত এমন মানুষও আছেন যাদের এ দুটোর কোনটাই হয় না। এছাড়া আছে abdominal cramping, পেট ফোলা অনুভুত হওয়া, গ্যাস তৈরি হওয়া, কখনও পায়খানার সাথে মিউকাস দেখা যাওয়া, বমিভাব ইত্যাদি। 

দুঃখের বিষয় হচ্ছে বায়োলজিক্যাল ঠিক কি কারণ রয়েছে এই সমস্যার পিছনে তা এখনও পুরোপুরি জানা সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন গবেষণায় কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে অন্ত্রের নিজস্ব কার্যক্ষমতার প্যাটার্ন পরিবর্তন, অন্ত্রে স্বাভাবিকের তুলনায় অধিক ব্যাকটেরিয়াল গ্রোথ, জিনগত কারণ, ফুড সেন্সেটিভিটি ইত্যাদিকে।

আমাদের অন্ত্রে যে পেশীগুলো থাকে তারা সংকোচন আর প্রসারণের মাধ্যমে খাবারকে পাকস্থলী থেকে অন্ত্র হয়ে মলদ্বার পর্যন্ত নিয়ে যায়। যদি কারো IBS থাকে, তাহলে এই পেশী সংকোচন আরও বেশি শক্তিশালী হতে পারে এবং তাতে খাবার খুব তাড়াতাড়িই পরিবাহিত হয়ে যায়, যার ফলে ডায়রিয়া দেখা যায়, আর তৈরি হয় গ্যাস এবং সাথে ফোলা ভাব অনুভুত হয়। আবার উল্টোটাও হতে পারে। অর্থাৎ এই সংকোচন যদি তুলনামূলক দুর্বল হয়, তবে খাবার পরিবহন হতে অনেক সময় নেবে, যার ফলাফল হিসেবে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। 

আরেকটু গভীর ব্যাখ্যায় যদি আমরা যাই, যাদের   IBS থাকে, তাদের অনেকের visceral hypersensitivity  দেখা যায়। অর্থাৎ তাদের অন্ত্রের সংবেদনশীলতা স্বাভাবিক মানুষের থেকে বেশি থাকে। অন্ত্রের গায়ে যে নার্ভগুলো থাকে, তাদের রেসপন্স থাকে অস্বাভাবিক রকমের বেশি- যার ফলে খাবার খাওয়ার সময় কিংবা পর অন্ত্রে প্রসারণ সৃষ্টি হয় বেশি, যা থেকে হয় ব্যাথা। মানে এর পেছনে ভূমিকা রয়েছে gastrointestinal nervous system এর। অন্ত্র এবং মস্তিস্কের মধ্যবর্তী সিগন্যাল দুর্বল হওয়ার ফলে স্বাভাবিক পরিপাকক্রিয়াতেও IBS আক্রান্ত ব্যাক্তির শরীর overreact করে, অর্থাৎ তৈরি করে ব্যাথা বা অন্যান্য সমস্যা। এমনকি অল্প পরিমাণ গ্যাস তৈরি হওয়া, যা স্বাভাবিক মানুষদের কোন সমস্যাই তৈরি করবে না,  IBS রোগীদের অতিসংবেদনশীলতার কারণে সেটাও হয়ে যায় কষ্টকর। 

আবার দেখা যায়, যেসব খাবারে short chain carbohydrate থাকে, যেমন lactose বা fructose, সেসব খাবার খেলেও IBS এর সমস্যা যাদের আছে তাদের উপরের লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারে। এর কারণ হচ্ছে, unabsorbed বা অশোষিত short chain carbohydrate সলিউটের মত কাজ করে, যা gastrointestinal wall দিয়ে লুমেনে পানি টেনে আনে, যার ফলে একদিকে visceral hypersensitivity থাকার কারণে শুরু হয় ব্যাথা আর পেটে খিঁচুনি, অন্যদিকে এই অতিরিক্ত পানির জন্য হয় ডায়রিয়া। এছাড়াও, সেই  carbohydrate, যারা কিনা শোষিত হতে পারে নি, তাদেরকে ব্যবহার করে অন্ত্রের দেয়ালে থাকা ব্যাকটেরিয়া , যার কারণে তৈরি হয় গ্যাস। এবং তাতে করেও তো ব্যাথাসহ বাকি কষ্টকর উপসর্গগুলো দেখা দিচ্ছেই।

এই তো গেল কিভাবে কি কারণে কি হচ্ছে। এছাড়া কিছু ফ্যাক্ট আছে যেসব IBS এর সমস্যাগুলোকে আরও প্রভাবিত করে, বলা যায় ইন্ধন যোগায়। এই ফ্যাক্টগুলো মানুষ ভেদে ভিন্ন হয়। যেমন-

প্রথমত হতে পারে স্ট্রেস। দিব্যি সুস্থ ছিলেন। হঠাৎ খবর এল আজ আপনার পরীক্ষার রেজাল্ট বের হয়েছে। যেই না শুরু হল টেনশন, অমনি শুরু হয়ে গেল পেটে ব্যাথা। কিংবা চাকরির প্রথম দিন আজ, ভালমত সেজেগুজে রেডি হয়েছেন। কিন্তু প্রথম দিন কেমন করে কি করবেন, কোন গোলমাল হয়ে যাবে কিনা এসব চিন্তা মাথায় আসতেই শুরু হয়ে গেল পেট ব্যাথা। হ্যাঁ, স্ট্রেস IBS এর লক্ষণগুলোকে প্রকট করে দিতে পারে। তবে এটা মাথায় রাখতে হবে, স্ট্রেস কিন্তু IBS হওয়ার জন্য দায়ী নয়। 

আরেকটি ফ্যাক্ট হল খাবার। যাদের IBS এর সমস্যা আছে, তাদের নির্দিষ্ট কিছু খাবার খেলে সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। মানুষ ভেদে অসহনীয় খাবারের তালিকা ভিন্ন হতে দেখা যায়।

মহিলাদের ক্ষেত্রে menstrual period এ IBS এর লক্ষণগুলো বেশি প্রকাশ হতে দেখা যায়। ধারণা করা হয় এর পিছনে হরমোনের ভূমিকা রয়েছে। এছাড়া আছে infectious diarrhea বা bacterial overgrowth এর মত অন্য কোন সমস্যা, যারা IBS এর সমস্যাগুলোকে প্রভাবিত করে।

এবার দেখি কাদের ক্ষেত্রে IBS বেশি দেখা যায়।

যাদের বয়স ৪৫ থেকে কম, তাদেরই এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। বয়স বৃদ্ধির সাথে IBS আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ব্যস্তানুপাতিক বলা চলে। উন্নত দেশগুলোতে প্রায় ১০-১৫% মানুষ IBS এ আক্রান্ত বলে বলা হয়, যার পরিমাণ সাউথ আমেরিকার দিকে বেশি। সবমিলিয়ে দেখা যায়, মহিলারা প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণে IBS এ ভোগে পুরুষদের তুলনায়।  এর পেছনে দায়ী থাকতে পারে হরমোন। যাদের পরিবারের কারো IBS ছিল, তারা রিস্কে আছেন বলে গবেষকরা মনে করেন।

সাধারনভাবে বলতে গেলে, IBS এর কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে কিছু ব্যাপার মাথায় রেখে চললে তুলনামুলকভাবে IBS এর অনেক সমস্যাকে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। IBS এর রোগীদের এমনভাবে চলা উচিত যাতে তাদের অন্ত্র স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে। অর্থাৎ, যার ঠিক যে যে কারণে সমস্যাগুলো দেখা দেয়, তারা যদি সেই ফ্যাক্টগুলোকে ম্যানেজ করে চলতে পারেন, তবেই অনেকটা ভালভাবে জীবনযাপন সম্ভব। যেমন আছে খাবার। IBS এ আক্রান্ত একজন একটু খেয়াল করে চললেই বুঝতে পারবেন ঠিক কি কি খাবার খেলে তার সমস্যা বেশি হচ্ছে। সেই খাবারগুলো খাদ্য তালিকা থেকে কমিয়ে দিয়েই অনেকাংশে সমস্যা কমিয়ে আনা সম্ভব। যেসব খাবারে short chain carbohydrate থাকে, যেমন আপেল, ফুলকপির মত কিছু খাবার এড়িয়ে চলা উপকারী হতে পারে। তবে হ্যাঁ, খাবারের তালিকা যেন সুষম হয়, তার দিকে খেয়াল রাখাও জরুরী।

তাছাড়া বলা হয়, আপনি কি খাচ্ছেন তার থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আপনি কখন খাচ্ছেন এবং কিভাবে খাচ্ছেন। আপনি যদি নিয়মিত নির্দিষ্ট সময় পর পর পরিমিত পরিমাণে খাবার খান, তাতে আপনার অন্ত্র আরও কার্যকরভাবে কাজ করতে সক্ষম হবে। তাছাড়া বেশি পরিমাণে আঁশ জাতীয় খাবার এবং প্রচুর পরিমাণে পানি বা তরল জাতীয় খাবার খেলে তা ডায়রিয়া এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দুটোর ক্ষেত্রেই লাভজনক হবে। 

অনেকক্ষেত্রে অ্যান্টিডিপ্রেশন জাতীয় ওষুধ সার্বিকভাবে সমস্যা কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। 

আর যেহেতু IBS এর সাথে অনেক ক্ষেত্রেই স্ট্রেস, দুশ্চিন্তা বা হতাশা জড়িত, চিন্তামুক্ত জীবনযাপন IBS এর সমস্যা কমাতে সাহায্য করবে। 

সবশেষে স্বস্তির বিষয় হল, IBS সাধারণত জীবন সংশয় ঘটায় না বা এতে মেজর কোন অর্গান ড্যামেজ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। IBS এ আক্রান্ত কোন ব্যাক্তির রোগ নির্ণয়ে তাই অনেক সময় কনফিউশনের সৃষ্টি হয়। কারণ দেখতে গেলে অন্ত্রে কোন ধরণের বাহ্যিক সমস্যা পাওয়া যায় না।

IBS নিয়ে এই ছিল সার্বিক কিছু কথাবার্তা।

ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন। আর আপনাদের মতামত কিংবা সমালোচনা সবসময়ই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই মতামত জানান। 

ধন্যবাদ :) 

কৃতজ্ঞতা (references) - Wikipedia, mayoclinic.org, Osmosis.org, youtube.

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন