Followers

বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৬

Anemia:অ্যানিমিয়া এবং কিছু কথাবার্তা


অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা কী?

অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা বলতে এমন একটা অবস্থাকে বোঝানো হয় যেখানে শরীরে যথাযথ পরিমাণে লোহিত রক্তকণিকা থাকে না যাদের কাজ হচ্ছে অক্সিজেন বহন করা। এই অবস্থাটার অনেক রকমফের আছে। যেমন শিকল সেল অ্যানিমিয়া,থ্যালাসেমিয়া,হাইপোথাইরয়ডিজম,ভিটামিন বি-১২ এর অভাব ইত্যাদি।যদি আমরা চিন্তা করি শিকল সেল অ্যানিমিয়া অথবা থ্যালাসেমিয়া নিয়ে তাহলে দেখা যায় এতে আক্রান্ত ব্যক্তি জন্মগতভাবে এই রোগ পেয়েছেন অর্থাৎ জীনগতভাবে বা উত্তরাধিকারসূত্রেই তিনি বহন করছেন কিন্তু অন্য দিকে যদি দেখা হয় দেহে ভিটামিন বি-১২ অথবা লৌহ এর অভাবের কথা তাহলে দেখা যায় দীর্ঘদিন ধরে হয়তো ওই দুটি উপাদান সমৃদ্ধ খাবার তাদের খাদ্যতালিকায় নেই যেগুলো খুব অত্যাবশ্যকীয়ভাবে দরকার লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদনের জন্য।

এবারে একটু জেনে নেওয়া যাক এই অ্যানিমিয়া শব্দের উৎপত্তি বিষয়ে। উনিশ শতকের শুরুর দিকে দুটি গ্রীক শব্দ an যার অর্থ without এবং haima যার অর্থ blood থেকে anaimia এবং সবশেষে আধুনিক ল্যাটিন হয়ে  anemia শব্দটি আমরা পাই।

অ্যানিমিয়ার কিছু লক্ষণ

ক্লান্ত বা ভারসাম্যহীন অনুভব করা

দেহে লৌহ বা ভিটামিন বি-১২ এর অভাব হলে একটি সুনির্দিষ্ট প্রোটিন হিমোগ্লোবিন হতে পারে না যা শরীরের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন পরিবহনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।এর ফলাফল তাহলে কি দাঁড়াচ্ছে?আমাদের দেহের খুব ক্ষুদ্র একটা কাজ করার জন্যও  অক্সিজেন অপরিহার্য কিন্তু যখন এই অক্সিজেন আসার বাহক অনুপস্থিত থাকছে বা পরিমাণে কম উৎপন্ন হচ্ছে তখন কোষে অক্সিজেন কম পৌঁছায় বা হয়তো যেতে পারেই না যে কারণে দেখা যায় ঠিকমত শ্বাস প্রশ্বাসের কাজ হচ্ছে না,দেহের বিভিন্ন বিপাকীয় কাজ ব্যাহত হচ্ছে।আর এভাবেই প্রায় সময় নিজেকে খুব ক্লান্ত মনে হয় বা ভারসাম্য পাওয়া যায় না।

ত্বক ধুসর বা ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া

যেহেতু হিমোগ্লোবিনের অভাবে বিভিন্ন কোষে প্রয়োজনীয় পরিমাণে অক্সিজেন যাচ্ছে না তাই দেহের সবচেয়ে বড় অঙ্গ ত্বক অনেকটা বর্ণহীন মনে হয়।লৌহ বা ভিটামিন বি-১২ এর ঘাটতির জন্য ত্বকে যথাযথভাবে রক্ত পৌঁছায় না তাই ত্বক অনেক সময় কিছুটা হলুদাভ মনে হয়।

বুকে ব্যাথা অনুভব করা

যখন দেহে লোহিত রক্তকণিকার পরিমাণ কমে যায় তখন আমাদের হৃদপিন্ডকে কাজ করতে হয় অর্থাৎ খাটতে হয় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি।অর্থাৎ ব্যাপারটা দাঁড়াচ্ছে এরকম যে যেহেতু লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা কম তাই ওই কম সংখ্যক রক্ত কোষকে সারা শরীরে পৌঁছানোর জন্য হৃদপিণ্ডকে অনেক বেশি শ্রম দিতে হচ্ছে।এই যে অস্বাভাবিকতা,এটাই অনেক সময় অনুভব হয় বুক ব্যাথা রূপে।

মনে রাখা দরকার যে অ্যানিমিক কন্ডিশনের জন্য বুকে ব্যাথা অনুভব হলে কখনোই সেটা উপেক্ষা করাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না বিশেষত তাদের জন্য যারা ইতোমধ্যেই অন্য কোনো হৃদরোগজনিত সমস্যায় ভুগছেন।

শিকল সেল অ্যানিমিয়া

অ্যানিমিয়ার এই রূপ একটা জীনগত সমস্যা।সুস্থ একজন ব্যক্তির দেহে হিমোগ্লোবিন যে অবস্থায় থাকে তার চেয়ে ভিন্নবস্থায় থাকে তাদের দেহে যারা এই জেনেটিক ডিজ-অর্ডারে ভুগছেন।

টিস্যুতে থাকা কোষের যাবতীয় কাজের জন্য অক্সিজেনের নিরবিচ্ছিন্ন প্রবাহ থাকা প্রয়োজন।সাধারণত লোহিত রক্তকণিকায় থাকা হিমোগ্লোবিন ফুসফুসে গিয়ে অক্সিজেনের সাথে বন্ধন তৈরী করে দেহের কোষে কোষে অক্সিজেন পৌঁছানোর কাজ করে থাকে।যেসব লোহিত রক্তকণিকা স্বাভাবিক অর্থাৎ সুস্থ হিমোগ্লোবিন ধারণ করে তাদের আকার হয় অনেকটা চাকতির (disc) মতএই বিশেষ আকৃতির পিছনেও কারণ আছে।এই আকৃতিটা সুযোগ করে দেয় যাতে তারা খুব সহজেই রক্ত নালিকার মধ্য দিয়ে চলে যেতে পারে এবং অক্সিজেন পরিবহন করতে পারে।কিন্তু যারা শিকল সেল অ্যানিমিয়াতে আক্রান্ত তাদের হিমোগ্লোবিন কিছুটা ভিন্ন রকমের হয়।এদের ভিন্নতার জন্য লোহিত রক্তকণিকাগুলো হয় কিছুটা অর্ধচন্দ্রাকৃতির (crescent)

এবার আরও কিছুটা ভিতরে যাওয়া যাক।

সুস্থ এবং স্বাভাবিক যে হিমোগ্লোবিন তাদেরকে বলা হয় হিমোগ্লোবিন এ ; আর যেসব হিমোগ্লোবিন ধারণ করে আছেন শিকল সেল অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা সেগুলোকে বলা হয় হিমোগ্লোবিন এস।এদের একটা বড় পার্থক্য হচ্ছে হিমোগ্লোবিন এ অক্সিজেন ছেড়ে দেওয়ার পরও অর্থাৎ ডি-অক্সিজেনেটেড হলেও দ্রবণীয়ই থাকে কিন্তু ডি-অক্সিজেনেটেড হলেই অদ্রবণীয় হয়ে যায় হিমোগ্লোবিন এস এবং এর কারণেই এরা তখন পলিমার তৈরী করে এবং অনেকটা একীভূত হয়ে যায় নিজেরা নিজেরা।এই অদ্রবণীয় অবস্থায়ই বহুলাংশে দায়ী লোহিত রক্তকণিকার অর্ধচন্দ্রাকৃতি আকৃতির জন্য।

এখন প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে যে এতবার শুরু থেকে বলে আসা হচ্ছে শিকল সেল অ্যানিমিয়া জেনেটিক ডিজ-অর্ডার কিন্তু জেনেটিক চেঞ্জটা কোথায় হচ্ছে তাহলে?

এই যে পরিবর্তিত হিমোগ্লোবিন এটা কেন হয়?যেহেতু সে একটা প্রোটিন তাই তার তৈরি হওয়ার জন্য অবশ্যই একটা জেনেটিক সিকোয়েন্স লাগবে।যে জেনেটিক সিকোয়েন্সের জন্য সুস্থ হিমোগ্লোবিন দরকার তাতে সামান্য একটা পরিবর্তন আসে।

এখানে উল্লেখ্য যে হিমোগ্লোবিনের চারটা চেইন আছে যাদেরকে বলা হয় আলফা ১ ও আলফা ২ এবং বিটা ১ ও বিটা ২।

হিমোগ্লোবিন এস এর পরিবর্তিত বৈশিষ্ট্যসমূহ আসে কারণ বিটা চেইনদ্বয়ের ছয় নাম্বার স্থানে দুটো অ্যাামিনো এসিড গ্লুটামেট  ( Glutamate ) এর বদলে ভ্যালিন (Valine) থাকে। এর ফলে স্বাভাবিকের চেয়ে এই হিমোগ্লোবিনে দুইটি ঋণাত্মক চার্জ কম থাকে এবং এই কম থাকাটাই দায়ী তার নিজেদের মাঝে একীভূত হয়ে যাওয়ার জন্য।

হিমোলাইটিক অ্যানিমিয়া

অ্যানিমিয়ার এই রূপে লোহিত রক্তকণিকা ধ্বংস হয়ে যায় এবং তাদের সুনির্দিষ্ট জীবনকালের আগেই তারা রক্তপ্রবাহ থেকে সরে যায়।

স্বাভাবিকভাবে একটা নির্দিষ্ট সময় পরপর যখন রক্তকণিকা মারা যায় তখন অস্থিমজ্জা আবার এদের তৈরী করে কিন্তু হিমোলাইটিক অ্যানিমিয়াতে রক্তকণিকা এতটাই তাড়াতাড়ি মারা যায় যে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহ অভাব মেটাতে গিয়ে তাল মেলাতে পারেন অত দ্রুত।

এর ফলে অনেক সময় অ্যারিদমিয়াস,হার্ট এনলারজমেন্ট,হার্ট ফেইলিউর দেখা যায়।

আজকে এ পর্যন্তই।পরবর্তীতে কথা হবে এই সম্পর্কিত কিছু অন্যান্য বিষয় নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই সুস্থ থাকুন, ভাল থাকুন।

তথ্যসূত্র


মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৬

আবারও হোমিওস্ট্যাসিস - পজিটিভ ফিডব্যাকের এপিঠ ওপিঠ

এই ব্লগের অন্য একটি পোস্টে আমরা হোমিওস্ট্যাসিস নিয়ে বেসিক কিছু আলোচনা করেছিলাম। আজ পজিটিভ ফিডব্যাক মেকানিজম (Positive Feedback Mechanism) নিয়ে আরও কিছু কথা বলব।


এই লেখাটি পড়ার আগে তাই  পূর্বের পোস্ট পড়ে নেয়াটা বেটার হবে -


পজিটিভ ফিডব্যাক মেকানিজম কোন সিস্টেমের, বা বায়োলজির দিক থেকে বলতে গেলে প্রাণীদেহের কোনরকম পরিবর্তনকে পজিটিভ দিকে টেনে নিয়ে যায়, অর্থাৎ পরিবর্তনটাকে প্রশমিত করার বদলে বাড়িয়ে দেয়।

আপাতদৃষ্টিতে এই মেকানিজমকে ভীষণ ভয়ংকর মনে হলেও সব ক্ষেত্রে কিন্তু তা নয়। আবার কিছু ক্ষেত্রে যে ভয়ংকর নয় সেটা বললেও ভুল বলা হবে। এর দুদিকই ছোট কিছু উদাহরণ দিয়ে বলার চেষ্টা করছি।

গুণগান করার আগে ভয়ংকর দিকটাই বলছি। আমাদের, মানে স্বাভাবিক মানুষের হৃৎপিন্ড (heart) প্রতি মিনিটে প্রায় ৫ লিটার রক্ত পাম্প করে। ধরা যাক একজন মানুষের শরীর থেকে হঠাৎই অ্যাক্সিডেন্টালি ২ লিটার রক্ত বের হয়ে গেল। তাতে শরীরে রক্তের পরিমাণ অনেকটা কমে যাবে, এবং তা হার্টের ঠিকঠাক কাজ করার জন্য উপযুক্ত নয়। অর্থাৎ, রক্তের পরিমাণ অনেক কমে যাওয়ায় হার্টে ব্লাড সাপ্লাই হবে কম এবং তাই হার্ট আগের মত পাম্প করতে পারবে না। যার ফলাফল হবে ব্লাড প্রেসার কমে যাওয়া। ব্লাড প্রেসার কমে যাওয়াতে হার্ট মাসলেও ব্লাড ফ্লো কম হবে। তাতে হার্ট তপাম্প করার জন্য আগের মত পর্যাপ্ত শক্তি পাবে না, এবং দুর্বল হয়ে যাবে তুলনামূলক। দুর্বল হার্টের পাম্প করার ক্ষমতা আগের চেয়েও কম হবে, এবং সেজন্য হার্ট মাসলে করোনারি ব্লাড ফ্লো আগের চেয়ে আরও কমে যাবে। এভাবে হার্ট আগের চেয়েও বেশি দুর্বল হবে, এবং পাম্প করবে আরও কম। যদি উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা না করা হয় তাহলে এই সাইকেল ততক্ষণ চলতে থাকবে যতক্ষণ না হার্ট পাম্পিং একেবারে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, মানে মৃত্য হচ্ছে।

এই প্রতিটা সাইকেল কিন্তু পজিটিভ ফিডব্যাকের ফলাফল, কারণ পরিবর্তনের শুরুটাই আরো একই পরিবর্তনের দিকে যেতে বাধ্য করছে।

বিপদজনক হলেও, যতক্ষণ পজিটিভ ফিডব্যাক খুব বেশি ভূমিকা না ফেলে, নেগেটিভ ফিডব্যাক কিন্তু তাকে ওভারকাম করতে পারে। যেমন, পূর্বের দুর্ভাগা ব্যক্তিটি যদি ২ লিটারের বদলে ১ লিটার রক্ত হারাতো, তাহলে স্বাভাবিক নেগেটিভ ফিডব্যাক মেকানিজম যা কার্ডিয়াক আউটপুট ও আর্টারিয়াল প্রেসারকে কন্ট্রোল করে, সেটা পজিটিভ ফিডব্যাককে ওভারব্যালেন্স করতে পারত, এবং বেচারাকে মরতে হত না।

এই গেল পজিটিভ ফিডব্যাকের কুফলের উদাহরণ। এর সুফলও যে বেশ আছে তা আগের পোস্টে বলেছিলাম (উপরের লিংক)। আমাদের যাদের জন্ম নরমাল ডেলিভারিতে হয়েছে, তাদের কিন্তু এই পজিটিভ ফিডব্যাক মেকানিজমের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।

শরীরের কোথাও কেটে গেলে যে রক্ত জমাট বাঁধে, সেটাও কিন্তু এই মেকানিজমের মাধ্যমেই। রক্ত জমাট বাঁধার জন্য কিছু clotting factors থাকে, যারা আসলে বিভিন্ন এনজাইম, এবং তারা থাকে নিস্ক্রিয় অবস্থায়। যখনই কোথাও কেটে রক্ত বের হয়, তখন সেখানে কিছু ফ্যাক্টর সক্রিয় হয় ,মানে একটিভেটেড হয়।  একটিভেটেড ফ্যাক্টর গুলো অন্য আরেকটা ক্লটিং ফ্যাক্টরকে একটিভেট করে, আবার সেই ফ্যাক্টর অন্য আরেকটাকে। এভাবে চলতে থাকে বারবার  যতক্ষণ না রক্ত জমাট বাঁধতে বাঁধতে রক্তপাত বন্ধ হচ্ছে। এটাও পজিটিভ ফিডব্যাক।

আরেকটা উদাহরণ দিচ্ছি । নার্ভ ইমপালসের (nerve impulse) মাধ্যমে নার্ভ সিগনালকে জায়গামত পৌঁছে দিতেও ভূমিকা আছে পজিটিভ ফিডব্যাক মেকানিজমের। নার্ভ ইমপালস নিয়ে একটু ঘাঁটাঘাঁটি করলেই বোঝা যাবে, নার্ভ সিগনাল পরিবাহিত হয় নার্ভ ফাইবারে থাকা সোডিয়াম গেট, পটাশিয়াম গেট আর সোডিয়াম-পটাশিয়াম পাম্পের মাধ্যমে। যখন নার্ভ ফাইবারে কোন সংবাদ আসল, তখন একদম অল্প সোডিয়াম আয়ন সোডিয়াম চ্যানেল দিয়ে নার্ভ ফাইবারের ভিতরে ঢুকে যায়। এতে নার্ভের স্বাভাবিক মেমব্রেন পটেনশিয়ালের পরিবর্তন হয়, এবং এই পরিবর্তন অন্য সোডিয়াম চ্যানেলগুলোকেও ওপেন করে দেয়। এতে মেমব্রেন পটেনশিয়ালের পরিবর্তন আরো বেড়ে যায় আর সাথে সোডিয়াম চ্যানেলের খুলতে থাকাও। (সোডিয়াম গেটগুলো আসলে ভোল্টেজ গেট, মানে ভোল্টেজের ডিফারেন্সের উপরে এদের বন্ধ হওয়া বা খোলা ডিপেন্ড করে)। এটা চলতে থাকে যতক্ষণ নানা নার্ভ সিগন্যাল নার্ভ ফাইবারের শেষ পর্যন্ত যাচ্ছে। এভাবে ছোট একটু সোডিয়াম লিকেজ নার্ভ সিগনাল কন্ডাক্ট করে পজিটিভ ফিডব্যাক মেকানিজমের মাধ্যমে। 

তার মানে পজিটিভ ফিডব্যাকের ভালো কিছু দিক যে আছে, এবং সেগুলো যে বেশ গুরুত্বপূর্ণ তা আমরা বুঝলাম আশা করি। একটা কথা আছে, "Positive feedback itself is part of an overall negative feedback process." যেমন রক্ত জমাট বাঁধার কথাটাই ধরা যাক, হোক কাজটা পজিটিভ ফিডব্যাকের মাধ্যমে, কিন্তু রক্ত জমাট বাঁধার কারণ তো শরীরের নরমাল ব্লাড ভলিউমকে ঠিক রাখার জন্যই। মানে নেগেটিভ ফিডব্যাক কাজ করছে পজিটিভ ফিডব্যাকের সাহায্য নিয়ে। 

এই পর্যন্তই থাকল আলোচনা। যেকোন মতামত জানাতে পারেন, আমরা অপেক্ষায় থাকবো। 

ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন :)

শনিবার, ১ অক্টোবর, ২০১৬

Renin Angiotensin Aldosterone System (RAAS)

সুপ্রিয় বন্ধুরা আশা করি সবাই ভাল আছেন। কিছুটা তাড়াতাড়িই হয়তো আবার কথা হচ্ছে আমাদের, ব্যাপার না আশা করি বিরক্ত হবেন না আজকের লিখায়। আজকের বিষয় হচ্ছে Renin Angiotension Aldosterone System (RAAS)।

Renin কী?
Renin বাবাজি হচ্ছেন একজন এনজাইম (enzyme) যিনি কিডনি থেকে রিলিজ হন এবং ধারণা করা হয়ে থাকে প্লাসেন্টা (placenta) থেকেও রিলিজ হন।

কি করেন উনি আমাদের শরীরে?
রক্তচাপ অর্থাৎ ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করেন।

কীভাবে?
স্বাভাবিকভাবেও কিন্তু আমাদের শরীরে রক্তের চাপ থাকে যেটা বয়সভেদে পরিবর্তিত হয়।বয়স যাই হোক না কেন রক্তচাপের অবশ্যই আদর্শ মান থাকবে যেটা বিভিন্ন কারণে কমেও যেতে পারে অথবা বাড়তেও পারে।

তো যদি স্বাভাবিক অবস্থা থেকে আমাদের রক্তচাপ কমে যায় তখন এই কমে যাওয়াটাকে ব্যালেন্স করার জন্য অর্থাৎ আপাতদৃষ্টিতে রক্তচাপ বাড়িয়ে প্রকারান্তরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয় এবং এই অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ কাজটাই করে Renin।

রক্তচাপ স্বাভাবিক থেকে নীচে নেমে আসলে কিডনি Renin রিলিজ করে।এই বিশেষ এনজাইম বাবাজি রক্তে একখানা প্রোটিনের উপর কাজ করে যার নাম হচ্ছে Angiotensinogen।এর ফলে
Angiotensin I তৈরী হয় যেটা কি না 10 amino acids নিয়ে গঠিত একটি প্রোটিন।এরপর ফুসফুস (Lungs) থেকে আগত Angiotensin-converting enzyme এর ক্রিয়ার জন্য Angiotensin I থেকে
2 amino acids চলে যাওয়ায়  8 amino acids নিয়ে গঠিত হয় Angiotensin II. এই Angiotensin II হচ্ছে খুব শক্তিশালী ভ্যাসোকন্সট্রিক্টর অর্থাৎ আরটারিওলসের সংকোচন ঘটাতে পারে, তবে হ্যাঁ Angiotensin I ও কিন্তু ভ্যাসোকন্সট্রিক্টর তবে সমস্যা সমাধানের জন্য যথেষ্ট দক্ষ সে না।

Angiotensin II আবার অ্যাড্রেনাল গ্ল্যান্ড থেকে অ্যাল্ডোস্টেরোন রিলিজকে প্রমোট করে। এর ফলে প্রথমে লবণ পরিশোষণ হয় এবং লবণ অর্থাৎ ইলেক্ট্রোলাইটসদের যেহেতু পানির অণু ধরে রাখার ক্ষমতা আছে তাই পানি পরিশোষণও বেড়ে যায়।
একদিকে রক্তের চলাচলের জায়গা যাচ্ছে কমে, আবার ফ্লুয়িড ভলিউমও যাচ্ছে বেড়ে আর এরই ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায়।

যে কোনো প্রশ্ন, ভাললাগা, খারাপ লাগা, সাজেশন ইত্যাদি আমাদের জানাতে পারেন। আবার কথা হবে অন্য কোন দিন অন্য কোন বিষয়ে, সে পর্যন্ত ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন।
টা টা।



সার্ভিক্যাল কান্সার

সুপ্রিয় বন্ধুরা আশা করি সবাই ভাল আছেন।অনেকদিন পর আজ আবার কথাবার্তা হবে আপনাদের সাথে।আজকের বিষয় সার্ভিক্যাল ক্যান্সার।

সার্ভিক্যাল কান্সার কী?
এক কথায় সার্ভিক্যাল কান্স্যার হচ্ছে এমন এক ধরণের ক্যান্সার যেটার উৎপত্তি হয় সার্ভিক্স থেকে।অস্বাভাবিক সেল ডিভিশনের ফলে শরীরের অন্যান্য স্থানেও ছড়িয়ে যেতে পারে।

কেন হয়?
Human papillomavirus এর টাইপ 16 এবং 18  সারা বিস্বজুড়ে সার্ভিক্যাল ক্যান্সারের ৭৫ শতাংশের জন্য দায়ী এবং টাইপ 31 এবং 45 দশ শতাংশের জন্য দায়ী।
যেসব নারী শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একাধিক পুরুষকে বেছে নেন অথবা তিনি যে পুরুষের সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়িত আছেন তিনি যদি একাধিক নারীর সাথে সম্পর্কিত থাকেন তাহলে সেই ব্যাপারটাও হতে পারে সেই নারীর সার্ভিক্যাল ক্যান্সারের জন্য ঝুঁকিস্বরূপ।
ধুমপায়ী যেসব নারী আছেন তাদের জন্য সার্ভিক্যাল ক্যান্সারের সম্ভাবনা অধূমপায়ীদের চেয়ে বেশি।ধূমপান সে এবার প্রত্যক্ষ আর পরোক্ষই হোক।
জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য কনট্রাসেপ্টিভ পিল যারা সেবন করেন ৫ থেকে ৯ বছর ধরে তাদের সার্ভিক্যাল ক্যান্সারের সম্ভাবনা স্বাভাবিকের চেয়ে তিনগুন বেড়ে যায় এবং সেটা চারে গিয়ে দাঁড়ায় তাদের ক্ষেত্রে যারা সেবন করছেন ১০ বছর বা ততোধিক সময় ধরে।
অতিরিক্ত গর্ভধারণও হতে পারে সার্ভিক্যাল ক্যান্সারের একটি কারণ।যেসব নারী পূর্ণ মেয়াদে মা হয়েছেন  ৭ বার তারও বেশি তাদের সার্ভিক্যাল ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে প্রায় ৪ গুন তাদের তুলনায় যারা একবারও মা হন নি।তাই বলে আবার এটা ভাববেন না যে মা হলেই তো সার্ভিক্যাল ক্যান্সার।ব্যাপারটা মোটেও তা না।আর যাদের ক্ষেত্রে গর্ভধারণের সংখ্যাটা  ১ অথবা ২ বার তাদের ঝুঁকি কিছুটা কম এবং সেটা দুই অথবা তিনগুণ।
ও আচ্ছা আরেকটা কথা!অপরিণত বয়সে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনও এই সার্ভিক্যাল ক্যান্সারের একটি কারণ।সুতরাং সাধু সাবধান!
চলুন এবার দেখে আসা যাক এমন কিছু কারণ যেগুলো সার্ভিক্যাল ক্যান্সার সম্পর্কিত এবং অতি অবশ্যই আমাদের কারোই এড়িয়ে যাওয়া উচিৎ না।


অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ/Abnormal Vaginal Bleeding
মেন্সট্রুয়েল সাইকেল চলাকালীন সময়ে যে স্বাভাবিক পরিমাণ ব্লাড যায় তার চেয়ে বেশি পরিমাণে যাওয়া।

শারীরিক কার্যাদি পরবর্তী রক্তক্ষরণ/Bleeding After Sex  
যদি এমন হয় যে শারীরিক স্বাভাবিক কাজের পর রক্তক্ষরণ।

অস্বাভাবিক মেন্সট্রুয়েল ম্যাটেরিয়াল/Unusual Discharge
স্বাভাবিক সাইকেলে যে ধরণের রক্ত যাচ্ছে তার চেয়ে ভিন্ন ধরণের রক্ত যাওয়া।
এবং আরও আছে
Pelvic and/or back pain
Pain during sex
A single swollen leg

সার্ভিক্যাল ক্যান্সার নিয়ে সাধারণ একটা ধারণা দেওয়ার জন্য আজকের এই পোস্ট।ভাল লাগলে বা কোনো সাজেশন বা জিজ্ঞাসা থাকলে আমাদের বলতে পারেন।
আর হ্যাঁ লিখাটা পড়েই তো আর আপনি সার্ভিক্যাল ক্যান্সার সম্পর্কে সব জানবেন না।আর আমিও নিজ থেকে লিখি নি মানে নিজেই লিখেছি কিছুটা পড়াশোনা করে।
আরও বেশি জানার জন্য এবং বোঝার জন্য দেখুন

  Reader's digest
https://goo.gl/cPsKk5
https://goo.gl/VjKmBR
https://goo.gl/DGz59U
https://goo.gl/WpZAs9
https://goo.gl/n4gKqT
সবাই ভাল থাকুন,সুস্থ থাকুন।নিজের দিকে খেয়াল রাখুন এবং নিজের বন্ধু,মা,বোন,মেয়ে,স্ত্রী এবং সহকর্মীদের প্রতি দায়িত্বশীল থাকুন।
আজ এ পর্যন্তই।

বুধবার, ৩ আগস্ট, ২০১৬

হোমিওস্ট্যাসিস (Homeostasis) - প্রাণের এক বিস্ময়কর এবং গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য!

এই পোস্টে আমরা আলোচনা করবো প্রাণরসায়নের একটি বহুল ব্যবহৃত শব্দ নিয়ে, যাকে বলা হয় হোমিওস্ট্যাসিস (Homeostasis)।


জীবনের সাথে সম্পর্কিত করার আগে জেনে নেই শব্দটির অর্থ কি। Homeostasis শব্দটি এসেছে Greek থেকে, যার অর্থ করলে হয় "সমঅবস্থা"। এটি হচ্ছে কোন একটা সিস্টেম বা ব্যবস্থার এমন এক বৈশিষ্ট্য, যার কারণে ওই সিস্টেমের পরিবর্তনশীল বিষয়গুলো এমনভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় যে, সিস্টেমের অভ্যন্তরীণ বা ভিতরের অবস্থা অপরিবর্তিত থাকে, কিংবা একটি নির্দিষ্ট মানের কাছাকাছি থাকে। ব্যাখ্যাটা বেশ জটিল হয়ে গেল? খুব কম কথায় বা সহজে বলতে গেলে হোমিওস্ট্যাসিস হচ্ছে কোন সিস্টেমের অভ্যন্তরীণ অবস্থার নিয়ন্ত্রণ।

হোমিওস্ট্যাসিস-এর ধারণা সর্বপ্রথম দেন ক্লড বার্নাড (Claude Bernard) ১৮৬৫ সালে। তিনি ছিলেন একজন ফ্রেঞ্চ শরীরতত্ত্ববিদ (Physiologist)।

শব্দটির নিজস্ব অর্থ থাকলেও এটি মুলত জীবদের ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয় বেশি। আমরা অনেকেই জানি, প্রাণীদেহে তাপমাত্রা, অম্লত্ব বা ক্ষারত্ব (pH), বিভিন্ন আয়ন যেমন সোডিয়াম, পটাশিয়াম বা ক্যালসিয়াম, রক্তে গ্লুকোজ ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের ব্যাপার থাকে এবং স্বাভাবিক অবস্থায় প্রত্যেকের একটা নির্দিষ্ট মাত্রা থাকে। কোন কারণে যদি এদের কোন একটির মাত্রার কোন পরিবর্তন হয়, তবে তাকে আগের অবস্থার কাছাকাছি ফিরিয়ে নেয়ার জন্য আমাদের শরীর প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করে। দারুণ না? জীবের এমন ক্ষমতাকেই জীববিজ্ঞানে হোমিওস্ট্যাসিস বলা হয়।

এর মানে এই দাঁড়াচ্ছে, বাহ্যিক কোন প্রভাবে বা অন্য কোন ঘটনায় যদি শরীরের কোন অবস্থার পরিবর্তন ঘটে, তার জন্য আমাদের দেহে এমন কৌশল ঠিক করা আছে যা সেই পরিবর্তনকে কমিয়ে দিতে পারে বা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়ার জন্য কাজ শুরু করে দেয়।

বোঝাই যাচ্ছে হোমিওস্ট্যাসিস এর উদ্দেশ্য খুবই মহৎ এবং আমাদের জন্য বেশ দরকারীও। একটা উদাহরণ দেই। ধরলাম কোন কারণে আমার ব্লাড প্রেসার বেড়ে গেল। তখন আমার হার্ট কিছুটা স্লো হয়ে ব্লাড প্রেসারটাকে কমিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবে।

মজার না ব্যাপারটা? এবার আশা করি কঠিন মনে হচ্ছে না।

হোমিওস্ট্যাসিস মেকানিজমের দুইটা প্রধান অংশ আছে :
১) সেন্সর (Sensor),
২) নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (Control Center)

নাম দিয়েই কাজের ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। সেন্সরের কাজ হচ্ছে পরিবর্তনটাকে সনাক্ত করা, আর কন্ট্রোল সেন্টারের কাজ এমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাতে পরিবর্তনটা কমে গিয়ে আগের অবস্থায় ফিরে যায়। তখন কিন্তু আর সেন্সর কাজ করে না।

Homeostasis Control Mechanism
                               
ব্লাড প্রেসারের উদাহরণটাই আবার ধরা যাক। ব্লাড প্রেসার বেড়ে গেলে সেন্সর রিসেপ্টর সিগন্যাল পাঠায় ব্রেনের কন্ট্রোল সেন্টারে। তখন সেন্টার ধমনীর দেয়ালে নার্ভ সিগন্যাল পাঠানো বন্ধ করে দেয়, যেন ধমনী কিছুটা শিথিল হতে পারে। তাতে ব্লাড প্রেসার কমে যায়, আর তারপর কন্ট্রোল সেন্টারে সিগন্যাল পাঠানোও বন্ধ হয়ে যায়।

প্রয়োজন বুঝে হোমিওস্ট্যাসিস দুই ধরণের হয়-
(১) নেগেটিভ ফিডব্যাক
(২) পজিটিভ ফিডব্যাক

মজার ব্যাপার হচ্ছে আমরা এই পর্যন্ত যা যা বুঝলাম, বলা যায় তার সবই হোমিওস্ট্যাসিসের নেগেটিভ ফিডব্যাকের কাজ। তার মানে নেগেটিভ ফিডব্যাক হচ্ছে এমন নিয়ন্ত্রণ যা কোন পরিবর্তনকে স্বাভাবিক অবস্থায় বা আইডিয়াল অবস্থায় নিয়ে আসে।

এর আরও একটি সহজ উদাহরণ দেখে নেই। আমাদের শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ করে ব্রেনের হাইপোথ্যালামাস । কোন কারণে যদি তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়, তাহলে ব্রেন ডার্মাল ব্লাড ভেসেলে সিগন্যাল পাঠায়, আর তখন ঘামগ্রন্থি থেকে ঘাম নিঃসৃত হয়। ফলশ্রুতিতে শরীর কিছু তাপ হারায়, আর শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।

এবার পজিটিভ ফিডব্যাক নিয়ে কথা বলা যাক। নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে এর কাজ নেগেটিভ ফিডব্যাকের উল্টোটা হবে। অর্থাৎ এটি এমনভাবে কাজ করে যাতে যে পরিবর্তনটা হয়েছে তা একই দিকে যেতে থাকে, মানে পজিটিভ ফিডব্যাক পরিবর্তন কমানোর বদলে আরও বাড়িয়ে দেয়!

অদ্ভুত না?

ব্যাপারটা কিন্তু যথেষ্ট ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। যদি আমার জ্বর আসে, পজিটিভ ফিডব্যাক তখন আমার শরীরের তাপমাত্রা আরও বাড়িয়ে দেবে! ফলাফলে মৃত্যুও হতে পারে!

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, যেখানে হোমিওস্ট্যাসিস পড়ে আমরা দেখলাম এটা আমাদের উপকারেই কাজ করে, তাহলে এমন মেকানিজম আমাদের শরীরে কেন যা আমাদের ক্ষতি করবে?

আসলে আমরা এমনভাবেই তৈরি যে আমাদের ভিতরকার প্রতিটি কাজ আমাদের কোন না কোন প্রয়োজনের জন্যই রয়েছে। তেমনিভাবে ক্ষেত্রবিশেষে পজিটিভ ফিডব্যাকও আমাদের প্রয়োজন হয়।

এর খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি উদাহরণ হল প্রসব যন্ত্রণা। যখন কোন মা সন্তান জন্ম দেন, তখন সন্তানের মাথা সারভিক্সে চাপ দেয়, যেখানে সেন্সর রিসেপ্টর থাকে। তাতে ব্রেনে সিগন্যাল যায়, আর ব্রেন পিটুইটারি গ্ল্যান্ডকে নির্দেশ দেয় অক্সিটোসিন নামের এক হরমোন নিঃসরণ করতে। অক্সিটোসিন রক্তের মাধ্যমে এসে জরায়ুকে আরও সঙ্কুচিত করে। তাতে ব্যথা আরও বেড়ে যায়, আর সারভিক্স আরও বেশি উদ্দীপিত হয়। সন্তান জন্মের প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত এই ক্রিয়া চলতে থাকে, অর্থাৎ জরায়ু সঙ্কোচন আরও বাড়তে থাকে, সাথে প্রসব যন্ত্রণাও।

                             

তার মানে পজিটিভ ফিডব্যাক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই স্বাভাবিকভাবে একটি সন্তান জন্মের প্রক্রিয়া শেষ হয়। পজিটিভ ফিডব্যাকের গুরুত্ব তাহলে কোন অংশেই কম নয় বোঝা যাচ্ছে।

আশা করছি হোমিওস্ট্যাসিস নিয়ে মোটামুটি একটা ধারণা দিতে পেরেছি এই পোস্টের মাধ্যমে। প্রাণের আরও অনেক রহস্যের সন্ধান পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।

আর হ্যাঁ, আপনাদের যেকোনো মতামত আমাদের কাছে মূল্যবান, তাই মতামত জানাতে ভুলবেন না। ভাল থাকুন :) 


ছবি - ইন্টারনেট। 

শনিবার, ২৫ জুন, ২০১৬

রক্ত আসলে কি ?

রক্ত আমরা সবাই চিনি। শরীরের কোথাও কেটে গেলে টকটকে লাল রঙের যে তরল পদার্থ বের হয়ে আসে সেটাই রক্ত। রক্ত আমাদের হৃৎপিণ্ড থেকে শরীরের বিভিন্ন অংশে যায়, আবার সেসব অংশ থেকে হৃৎপিণ্ডে ফিরে আসে। আরও নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, রক্ত হৃৎপিণ্ড থেকে অক্সিজেন নিয়ে ধমনীর মাধ্যমে সারা শরীরে অক্সিজেন বিলি করে বেড়ায়, আবার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড সংগ্রহ করে শিরার মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডে ফেরত নিয়ে আসে। এভাবে আমাদের সারা দেহে রক্ত ঘোরাফেরা করে অক্সিজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড এবং অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় বর্জ্য পদার্থ পরিবহনসহ আরও অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে চলে, যা আমরা টেরই পাই না! 


এই রক্ত আসলে কি? আমরা আজকে জানবো রক্তের ভিতরে আসলে কি কি থাকে যার কারনে এত কাজ সে করতে পারে। কি রহস্য লুকিয়ে আছে লাল রঙের এই তরলে চলুন তাহলে এবার দেখা যাক। 

রক্তের ভিতরে কি আছে তা জানতে হলে আমাদের কিছু পরিমান রক্ত দরকার। ধরে নিচ্ছি আমার শরীর থেকে কিছু রক্ত ইনজেকশন দিয়ে বের করে নিলাম। এই রক্তে কি কি উপাদান আছে তা আসলে আলাদা করা সহজ নয়। রক্তে যা যা থাকে তা এমনভাবে মিশে থাকে যে খালি চোখ দিয়ে আলাদা ভাবে কিছু দেখা সম্ভব না। সেজন্য বায়োকেমিস্টরা এক ধরনের যন্ত্র ব্যবহার করে, যার নাম সেন্ট্রিফিউগাল যন্ত্র (Centrifugal machine)। টেস্টটিউবে রক্ত নিয়ে এই যন্ত্রে দিলে এটা এত স্পীডে ঘুরতে পারে যে (মিনিটে প্রায় ৩০০০ বার!!!) কিছুক্ষনের মধ্যে রক্ত দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়, যার নিচের ভাগে রক্তের ভারী উপাদানগুলো জমা হয়, আর হালকা উপাদানগুলো উপরের স্তরে থাকে। এই পদ্ধতিটিকে বলা হয় সেন্ট্রিফিউগেশন (Centrifugation)। এই নামকরনের কারণ যন্ত্রটি কাজ করে centrifugal force সৃষ্টির মাধ্যমে। 
Centrifiged blood sample

ধরে নিচ্ছি আমার রক্ত স্বাভাবিক এবং আমার রক্তজনিত কোন সমস্যা নেই। স্বাভাবিক কোন মানুষের রক্ত সেন্ট্রিফিউগেশন করলে দেখা যাবে, যে টেস্টটিউবে তার রক্ত রাখা হয়েছিল তা দুইভাগে ভাগ হয়ে গেছে এবং উপরের অংশের রঙ হালকা হলুদ ও এর পরিমাণ (প্রায় ৫৫%) নিচের গাঢ় লাল অংশের (প্রায় ৪৫%) চেয়ে কিছুটা বেশি। 

রক্তের উপরের এই হালকা হলুদ রঙের কম ঘনত্বের অংশটিকে বলা হয় রক্তরস বা প্লাজমা (Plasma)। প্রথমে দেখি এই প্লাজমাতে কি কি আছে। 

মজার ব্যাপার হচ্ছে আমরা যদি প্লাজমা থেকে এক ফোঁটা নিয়ে ভালভাবে দেখি, তাহলে দেখতে পাব এর ৯০%  ই পানি! (তার মানে রক্তের বেশিরভাগ অংশ জুড়ে যে প্লাজমা রয়েছে, তার বেশিরভাগটুকুই পানি!!) প্লাজমার বাকি ১০% এর মধ্যে ৮% ই হচ্ছে বিভিন্ন প্রোটিন। এর মাঝে একটি প্রোটিন হচ্ছে অ্যালবুমিন (Albumin)। প্লাজমার এই অ্যালবুমিন রক্তকে শিরা বা ধমনীর ভিতরে রাখতে সাহায্য করে বা বলা যায় বের হয়ে যাওয়া থেকে আটকায়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন হল অ্যান্টিবডি (antibody)। আমরা অনেকেই জানি অ্যান্টিবডি কি কাজ করে। এতে রোগ প্রতিরোধের উপাদান থাকে, যা আমাদের ইনফেকশন হওয়া থেকে বাঁচায়, রোগ-বালাইয়ের হাত থেকে রক্ষা করে। আরও একটি দরকারি প্রোটিন থাকে প্লাজমাতে, যার নাম ফাইব্রিনোজেন (Fibrinogen)। হাত বা পা কেঁটে গেলে আমরা দেখি কিছুক্ষণের মধ্যে বের হওয়া রক্ত জমাট বেঁধে রক্ত পড়া বন্ধ করে দেয়। এই জমাট বাঁধার পেছনে রয়েছে ফাইব্রিনোজেনের ভূমিকা। 

প্রোটিনের পর প্লাজমার বাকি ২% অংশে থাকে ইনসুলিনের মত কিছু হরমোন, থাকে ইলেক্ট্রোলাইটস যেমন সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ক্লোরিন ইত্যাদি, থাকে গ্লুকোজ, অ্যামিনো অ্যাসিড, লবণ, স্নেহপদার্থ, ভিটামিন ইত্যাদির মত নিউট্রিয়েন্টস। 

এই এত্তকিছু মিলেই আমাদের রক্তের প্লাজমা। 

(সেরাম (Serum) শব্দটা আমরা রক্তের ক্ষেত্রে অনেকসময় শুনতে পাই। এটা কি জিনিস? মজার ব্যাপার হচ্ছে, সেরাম আর প্লাজমা কিন্তু একই বলা যেত, শুধু যদি একটা ছোট্ট পার্থক্য না থাকতো এদের। আসলে প্লাজমা থেকে ফাইব্রিনোজেন বা রক্ত জমাট বাঁধার জন্য দায়ী অন্যান্য উপাদান বাদ দিলে যা থাকবে সেটাই সেরাম!!)

প্লাজমা নিয়ে অনেক কথা তো হল। এবার তাহলে আমাদের টেস্টটিউবের নিচে জমা হওয়া রক্তের গাঢ় ঘন অংশে কি কি আছে জেনে নেই।

এই অংশে থাকে রক্তের সব কোষগুলো, যাকে বলা যায় রক্তকণিকা (Blood corpuscles)। মোট তিন ধরনের রক্তকণিকা আছে আমাদের। 
Blood corpuscles

  • লোহিত রক্তকণিকা বা Red blood cell (RBC) বা Erythrocyte
  • শ্বেত রক্তকণিকা বা White blood cell (WBC) বা Leucocyte 
  • অণুচক্রিকা বা Plateles বা Thrombocyte
প্লাজমার ঠিক নিচে একটা ছোট অংশে (প্রায় ১%) জমা হয় শ্বেত রক্তকণিকা এবং অণুচক্রিকা। যদিও এদের পরিমাণ রক্তে তুলনামূলক খুবই কম, কিন্তু এদের কিন্তু অবহেলা করা চলবে না। এরা আমাদের জন্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। শ্বেত রক্তকণিকা দেখতে বর্ণহীন এবং এরা ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় জীবাণু ধ্বংস করে। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে কতটা উপকার করে এরা আমাদের। অণুচক্রিকা সবচেয়ে ছোট রক্তকণিকা হলেও উপকারের দিক দিয়ে এরাও কিন্তু কম যায় না। অণুচক্রিকাও ক্ষত হলে রক্ত জমাট বাঁধায়, হিমোস্ট্যাটিক প্লাগ (hemostatic plug) গঠন করে রক্তক্ষরণ বন্ধ করে, এমনকি সেরাটোনিন নামের এক রাসায়নিক পদার্থ উৎপন্ন করে রক্তপাত কমায়। সেজন্যই বলছিলাম, ছোট মানেই তুচ্ছ নয়!

এবার আসি এর পরের সবচেয়ে ঘন যে অংশ থাকে টেস্টটিউবের সবচেয়ে নিচে (প্রায় ৪৫%)। এরা হচ্ছে লোহিত রক্তকণিকা বা Red blood cell। এই লোহিত রক্তকণিকাতেই থাকে হিমোগ্লোবিন (হিমোগ্লোবিন নিয়ে বিস্তারিত আমাদের অন্য একটি পোস্টে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি সেখান থেকে হিমোগ্লোবিন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারনা পাবেন)।  হিমোগ্লোবিন কিন্তু একটি প্রোটিন। (তার মানে শুধু যে প্লাজমাতেই প্রোটিন থাকে, ব্যাপারটা কিন্তু তেমন নয়। লোহিত রক্তকণিকা এবং শ্বেত রক্তকণিকাতেও অনেক প্রোটিন থাকে।)

লোহিত রক্তকণিকা রক্তের একটা বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশ, কারণ এরাই অক্সিজেন পরিবহন করে (যখন যেখানে দরকার)। যেহেতু আমরা বেঁচে থাকি অক্সিজেনের উপর নির্ভর করে, আর এই অক্সিজেন আমাদের প্রয়োজনমত শরীরের বিভিন্ন অংশে সরবরাহ করে লোহিত রক্তকণিকা, তাই আমরা লোহিত রক্তকণিকার কাছে চিরঋণী। আর আমাদের রক্তের রঙ যে লাল, তার কারণ এই লোহিত রক্তকণিকা, বা আরও নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে লোহিত রক্তকণিকার ভিতরে থাকা হিমোগ্লোবিন। 

রক্তে লোহিত রক্তকণিকার শতকরা পরিমাণকে বলা হয় হেমাটোক্রিট (Hematocrit)। তার মানে বোঝা গেল স্বাভাবিক কোন মানুষের হেমাটোক্রিট ৪৫% (পুরুষের ক্ষেত্রে ৪৫%, নারীদের ক্ষেত্রে ৪০%)। রক্ত পরীক্ষায় এই হেমাটোক্রিটের পরিমাণ ঠিক আছে কিনা জেনে নেওয়া হয়, কারণ  এর তারতম্য বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে।

এই হল সংক্ষেপে আমাদের রক্তের ভিতরকার সব রহস্য। এই সব উপাদান মিশে তৈরি হয় রক্ত। 

অনেককিছু বলে ফেললাম আজ রক্ত নিয়ে। আজ আর না। রক্ত সম্পর্কিত কিছু তথ্য দিয়ে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা এখানেই শেষ করছি।

  • পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মানুষের দেহে গড়ে প্রায় ৫-৬ লিটার রক্ত থাকে (মানুষের শরীরের মোট ওজনের প্রায় ৮%!)। 
  • রক্ত সামান্য ক্ষারীয়। এর pH মাত্রা গড়ে ৭.৩৬-৭.৪৫ এবং সজীব রক্তের তাপমাত্রা ৩৬-৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
  • সুস্থ দেহে প্রতি ১০০ মিলিমিটার রক্তে ১৫ গ্রাম হিমোগ্লোবিন থাকে।
  • পূর্ণবয়স্ক পুরুষে প্রতি কিউবিক মিলিমিটার রক্তে লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা ৫০ লক্ষ এবং পূর্ণবয়স্ক নারীদের প্রতি কিউবিক মিলিমিটার রক্তে লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা ৪৫ লক্ষ।
  • প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি লোহিত রক্তকণিকা থাকলে (৬৫ লক্ষের বেশি) তাকে বলা হয় পলিসাইথেমিয়া (Polycythemia)। আবার উল্টোটা হলে, মানে লোহিত রক্তকণিকা অনেক কম থাকলে (৫০ লক্ষের চেয়ে ২৫% কম) তাকে রক্তাল্পতা বা anemia বলা হয়।
  • মানুষের লোহিত রক্তকণিকার গড় আয়ু ১২০ দিন (৪ মাস)।                                                         (এ কারণেই প্রতি ৪ মাস পর পর নির্দিষ্ট পরিমাণ রক্ত দান করা সম্ভব, এবং এতে কোন ক্ষতি হয় না বরং অনেক উপকার হয়।)
  • পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতি কিউবিক মিলিমিটার রক্তে শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা ৫-৮ হাজার।
  • শ্বেত রক্তকণিকার গড় আয়ু ১-১৫ দিন।
  • পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতি কিউবিক মিলিমিটার রক্তে অণুচক্রিকার সংখ্যা ২.৫-৫ লক্ষ।
  • অণুচক্রিকার গড় আয়ু ৫-১০ দিন।
  • অণুচক্রিকার সংখ্যা বেড়ে গেলে তাকে থ্রম্বোসাইটোসিস বলে।
  • বেশ কিছু মাকশড়াঅক্টোপাসস্কুইড রয়েছে যাদের রক্তের রঙ নীল। আবার কিছু মাকড়শা রয়েছে যাদের রক্তের রঙ সবুজ বা বেগুনী হয়ে থাকে। অনেক প্রজাপতির রক্তের রঙ হলদেটে হয়। টিকটিকির রক্ত কিন্তু সাদা রঙের!
  • রক্তে ০.২ মিলিগ্রাম স্বর্ণ আছে! 
  • অন্যান্য রক্তকণিকার মত লোহিত রক্তকণিকায় কোন নিউক্লিয়াস, রাইবোসোম নেই।
এই আলোচনা এখানেই শেষ করছি। আমাদের পোস্ট আপনাদের ভাল লাগলে বা কোন উপকারে আসলে তবেই আমাদের এই ব্লগের সার্থকতা। যেকোনো মতামত বা সমালোচনা আমাদের জানাতে পারেন মন্তব্যের মাধ্যমে। ভাল থাকবেন :) 

কৃতজ্ঞতা (references) - উচ্চ মাধ্যমিক জীববিজ্ঞান (প্রাণীবিজ্ঞান)- গাজী আজমল এবং গাজী আসমত, উইকিপিডিয়া, খান একাডেমী, প্রিয়.কম। 
ছবি কৃতজ্ঞতা - ইন্টারনেট 

সোমবার, ১৩ জুন, ২০১৬

হিমোগ্লোবিন নিয়ে কিছু কথা

সুপ্রিয় বন্ধুরা আশা করি সবাই ভাল আছেন।আজকে আমরা আলোচনা করব হিমোগ্লোবিন (Hemoglobin) নিয়ে।
প্রথমেই যে প্রশ্নটা মনে আসে সেটা হল যে হিমোগ্লোবিন নামের পিছনের কারণ কী?বেশ তো চলুন জেনে নেওয়া যাক কি এই হিমোগ্লোবিন কেনই বা তার এমন নাম!
Hemolglobin শব্দটা এসেছে ইংরেজি শব্দ  Hematoglobulin থেকে যা থেকেই সংক্ষেপিত আকার হিসেবে Hemoglobin শব্দটা  আমরা পাই উনিশ শতকের মাঝামাঝিতে।স্প্যানিশ ভাষাতে একে বলা হয়ে থাকে Hemoglobina
হিমোগ্লোবিন হচ্ছে একটি মেটালোপ্রোটিন (Metalloprotein) অর্থাৎ এমন একটি প্রোটিন যেটি তার কো-ফ্যাক্টর(Cofactor) হিসেবে একটি ধাতুকে ব্যাবহার করে।এখানে কো-ফ্যাক্টর সম্পর্কে বলতে হলে আপাতত বলতে হচ্ছে একটি প্রোটিনের কাজের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করে তার কো-ফ্যাক্টর।
আচ্ছা কাজের সহায়তা তো চট করে বলে ফেললাম কিন্তু সে কাজটাই তো জানা হল না!এবার চলে যাওয়া যাক আরেকটু গভীরে অর্থাৎ হিমোগ্লোবিনের কাজ-কারবার,সে দেখতে কেমন,তার চলাফেরা কিরকম ইত্যাদি ইত্যাদি।তবে ঘাবড়াবার কিচ্ছু নেই।আমরা ধীরে ধীরে তাকে জানার চেষ্টা করব।একবারে কোনো মানুষকেই কি বলুন জানা যায়?আর তো মানুষেরও ভিতরে থাকে।কি মহা মুসিবত!

ওক্কে এবার আসা যাক হিমোগ্লোবিনের কাজের ব্যপারে।আমাদের শরীর টিকিয়ে রাখার মূল শর্তই হল শারীরবৃত্তীয় যতসব কাজ আছে সেগুলো ঠিকঠাক হওয়া।এজন্য খুব করে দরকার হচ্ছেঅক্সিজেন।আমরা যখন শ্বাস গ্রহণ করি আমরা মূলত অক্সিজেন টেনে নেই এবং সে অক্সিজেন ফুসফুস থেকে সমগ্র শরীরে ছড়িয়ে যায় প্রয়োজনানুযায়ী।এই যে পৌঁছানোর মহা গুরুত্বপূর্ণ কাজ সেটাই করে আমাদের হিমোগ্লোবিন সাহেব অতি সাবধানতার সাথে এবং অবশ্যই একটা নিয়ম মেনে।অর্থাৎ আমাদের শরীরে ট্রান্সপোর্টার প্রোটিনের মাঝে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হল মিস্টার হিমোগ্লোবিন। অর্থাৎ ব্যাপারটা হল এই যে হিমোগ্লোবিন ফুসফুস থেকে পুরো শরীরে অক্সিজেনকে বিলি করে দিচ্ছে আর শরীরের বিভিন্ন টিস্যুতে হরেক রকমের কাজের ফল হিসেবে যে কার্বন-ডাই-অক্সাইড তৈরি হচ্ছে তা সে নিয়ে আসছে ফুসফুসে।বলতে পারেন এক নদীর দুইটি কূল যদি হয় টিস্যু আর ফুসফুস তাহলে হিমোগ্লোবিন হচ্ছে সেই নদীর খেয়া।
এবার একটু প্রশ্ন এসেছে বোধহয় হিমগ্লোবিনের চেহারা সুরুত কেমন?মানে কি এমন গঠন তার যে সে এতটা নিষ্ঠার সাথে অক্সিজেন আর কার্বন-ডাই-অক্সাইড পারাপারের কাজটুকু করে যাচ্ছে?
ওয়েল,অবশ্যই তার গঠন এই পরিবহনের জন্য উপযুক্ত।লিখার শুরুর দিকে বলা হয়েছিল যে হিমোগ্লোবিন হচ্ছে একখানা মেটালোপ্রোটিন অর্থাৎ তার কাজ যাতে খানিকটা সহজ হয়,সে যাতে তার কাজটা যাতে সঠিকভাবে সম্পন্ন হয় তার জন্য একটি ধাতু বা মেটাল দরকার।একেকটি মেটালোপ্রোটিনের জন্য দরকারি মেটাল একেক রকম এবং আমাদের মাননীয় হিমোগ্লোবিনের জন্য দরকারি মেটালটি হল লোহা বা আয়রন।এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি হল আয়রন আসলে কিভাবে বা বলা ভাল কীরূপে হিমোগ্লোবিনের সাথে জড়িত।দুটি বিষয় এখানে বলতে হচ্ছে।
এক. আয়রন,হিমোগ্লোবিনের মাঝে আয়ন হিসেবে থাকে পরমাণু হিসেবে নয়।
দুই. হিমোগ্লোবিনের মাঝে একটা রিং থাকে যার নাম Porphyrin IV .এই পোরফাইরিন রিং এর মাঝেই একটি আয়রন আয়ন থাকে Fe2+  ।সার্বিকভাবে একটি আয়রন আয়নকে Fe(ii) একবারে কেন্দ্রে ধরে নিলে এর চারপাশে থাকছে পোরফাইরিন রিং,অ্যামিনো এসিড হিস্টিডিনের (Histidine),ইমিডাজল (Imidazole) গ্রুপের নাইট্রোজেন পরমাণু।এই হল মোটামুটিভাবে ভেতরকার কথা।ও আচ্ছা এসব কথা বলতে হল হিম (Heme) গ্রুপের  পরিচয় জানতে।
এই পোরফাইরিন রিং এর মাঝে থাকে চারটা পাইরোল (Pyrrole) রিং যারা পরস্পরের সাথে মিথিন (Methine) ব্রিজের মাধ্যমে যুক্ত থাকে এবং সবশেষে তারা যুক্ত হয় কেন্দ্রে থাকা সেই আয়রন আয়নের সাথে।একদম কেন্দ্রে থাকা আয়রন পরমাণু যুক্ত থাকে চারটা নাইট্রোজেন পরমাণুর সাথে যারা একই সমতলে অবস্থিত।এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে এই নাইট্রোজেন পরমাণু কি উপকার করছে আয়রন আয়নের সাথে যুক্ত থেকে?প্রকৃতপক্ষে এই নাইট্রোজেন পরমাণুর মাধ্যমেই আয়রন আয়নটি গ্লোবিউলার প্রোটিনের সাথে যুক্ত থাকে।কিন্তু কথা হচ্ছে এই গ্লোবিউলার প্রোটিন (Globular protein) বাবাজির উদয় হল কিভাবে?
একটা জিনিস মনে থাকা উচিৎ আমাদের যে আমরা এতক্ষ্ণ যা বকবক করলাম তা কিন্তু মূল প্রোটিন না।আমরা যে হিমোগ্লোবিন বারবার বলে যাচ্ছি সেটা আসলে এক ধরণের গ্লোবিউলার বা স্ফেরোপ্রোটিন (Spheroprotein )।এদের এহেন নামকরণের কারণ হল এরা দেখতে গোলকের মতন (Globe-like).
 হিমোগ্লোবিন মূলত চারটি গ্লোবিউলার প্রোটিন সাব ইউনিটের (Subunit) সম্মিলিত রূপ।প্রতিটি সাব ইউনিটে থাকে প্রোটিন চেইন যা কি না দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত থাকে হিম গ্রুপের সাথে।
হিম গ্রুপকে কেন্দ্র করে একটা অষ্টতলক (octahedron)  তৈরি হয় যার ষষ্ঠ অবস্থানে উভমুখীভাবে অক্সিজেন এসে যুক্ত হয় সন্নিবেশ সমযোজী বন্ধনের মাধ্যমে।একটি অক্সিজেন পরমাণু এসে যুক্ত হয় আয়রন আয়নে এবং আরেকটি অক্সিজেন পরমাণু কৌণিকভাবে অবস্থান করে। 
এখানে মনে রাখার মত একটি বিষয় হচ্ছে অক্সিজেন পরমাণুর যুক্ত হওয়াটা সাময়িক এবং উভমুখী।যে দুটো বিষয় একই সাথে ঘটে তা হল অক্সিজেনের সাময়িকভাবে সুপার অক্সাইডে রূপান্তর এবং আয়রন আয়নের জারণ (Fe2+ to  Fe3+ ).
প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দেহে সবচেয়ে সাধারণ বা সচরাচর দেখতে পাওয়া যায় যে হিমোগ্লোবিন তার বর্ণনাই আমরা মূলত এতক্ষণ জানলাম।একে বলা হয়ে থাকে টেট্রামার (Tetramer) যেহেতু চারটি সাব ইউনিট থাকে এবং এর নাম হচ্ছে হিমোগ্লোবিন (Hemoglobin A).
এর মাঝে থাকে দুটো করে আলফা(α) এবং বিটা (β) চেইন।তারা যথাক্রমে ১৪১ এবং ১৪৬ টি অ্যামিনো এসিডের সমন্বয়ে তৈরি।চেইন গুলোকে বলা হয় α12 এবং β1, β2

উফফ আজ আর না।অনেক কথা বলে ফেলেছি আমি বড্ড ক্লান্ত আপনারা হয়তো ভাবছেন এর বকবক কখন শেষ হবে?
কথা দিচ্ছি আজ আর না।আজ পর্যন্তই রইল।পরবর্তীতে কথা হবে নতুন কোনো বিষয়ে।সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন আর হ্যাঁ যে কোনো গঠনমূলক সমালোচনা সাদরে গ্রহণ করা হবে সে নিশ্চয়তা থাকছেই।
টা টা।